প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার বদলের পর নতুন সরকারের সঙ্গে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন সরকার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে কোন সময় দেয়নি। আগের সরকার তো এক বছরের বেশি সময় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোন কথাই বলেনি। তারা বাংলাদেশের ১০ জন জনশক্তি রফতানিকারকের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করেছে। তখনকার সময় দেশটিতে গড়ে ওঠা একটি চক্র (প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ঘনিষ্ঠ) কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। কয়েক হাজার কোটি টাকা ওই চক্র দেশ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। এক বছরে ৫ লাখ কর্মী নিয়োগের কথা থাকলেও এক লাখের কিছু বেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে চক্রটি। কিন্তু বাংলাদেশে ১০ জনের সিন্ডিকেট ৬ লাখ কর্মীর কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়েছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে যৌথ ‘ওয়ার্কিং কমিটির’ বৈঠক গত এক বছরেও অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বৈঠকের সময় চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দিলেও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ কোন সাড়া দেয়নি। ‘জি টু জি প্লাস’ চুক্তিতে প্রতি মাসে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, আমরা বহু বার মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বসার জন্য সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছি। দেশটিতে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও চিঠি দেয়া হয়েছে। তবু কোন সাড়া মেলেনি। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এখন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, কিছু দিনের মধ্যে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিজনের কাজ থেকে মেডিক্যাল বাবদ ৫০ থেকে ৬০ হাজার করে টাকাও নিয়েছে সিন্ডিকেট। ৫ লাখের বেশি কর্মী মেডিক্যাল করে বসে আছে। কিন্তু তাদের সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারেনি। শুধু মেডিক্যাল থেকেই সিন্ডিকেট ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মালয়েশিয়ায় গঠিত সিন্ডিকেট প্রধান দাতু আমিন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই দুবাই পাড়ি জমান। দুবাই থেকে বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে বাংলাদেশ থেকে বায়রার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কানাডায় গিয়েছিলেন। তার অনুমতিতেই সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ১০ জনের সঙ্গে আরও ১০ জনশক্তি রফতানিকারকে সিন্ডিকেটে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এখন মোট ২০ জনের সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সম্প্রতি জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা আমার কাছে এসেছিলেন। তারা আমাকে বলেছেন, মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে- তাদের ব্যবসা যেন ঠিক থাকে এমন আলোচনা করার জন্য। আমি তাদের বলে দিয়েছি, আমি কোন সিন্ডিকেটের জন্য নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব না। জনশক্তি রফাতানিকারক সব ব্যবসায়ীর জন্যই কথা বলব। আমার কাছে সবাই সমান। গরিব মানুষকে ঠকিয়ে যারা বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। তাদের পক্ষে কথা বলার কিছু নেই। মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা আমি বুঝি-তাই আমি তাদের মুখের ওপর বলে দিয়েছি মালয়েশিয়ায় আর কোন মনোপলি ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বায়রার কমিটি জরুরী বৈঠকে বসেছিল। বায়রার বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা জানা যায়নি।
এ দিকে, গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে কী বাড়ছে না এটা আমি জানি না। তবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কম করে হলেও ১০ বার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের চিঠির কোন উত্তর দেয়নি। এক বছরের বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে ওয়ার্কিং কমিটির কোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
জি টু জি প্লাস চুক্তিতে বলা আছে, প্রতিমাসে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরও চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারও চিঠির কোন উত্তর দেয়নি। সচিবের সঙ্গে কথা বলার সময় বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজাও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও বললেন মালয়েশিয়া ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের কোন সময় দিচ্ছে না। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার সঙ্গে কর্মী নিয়োগে সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে কোন আলাপ আলোচনাই করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা চলছে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক যাতে অল্প সময়ের মধ্যে করা যায়।