চিহ্নিত কিছু রিক্রুটিং এজেন্সিকে ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা দিয়ে আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে এখন সেখানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ বাংলাদেশি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরার জন্য ধরনা দিচ্ছেন অসংখ্য নারীকর্মী; গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক নারী নিয়োগকর্তার ভোগলালসারও শিকার হচ্ছেন। উপরন্তু রাজকীয় দেশটির সরকার সেখানে ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় খুবই নাজুক অবস্থায় পড়ছেন বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক শ্রমবাজার সৌদি আরব। প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি দেশটিতে কর্মসংস্থানের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬ কর্মী সৌদি আরবে গেছেন।
জানা গেছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তার নেওয়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটির অর্থনীতিতে রূপান্তরের পালা চলছে। ইতোমধ্যেই নতুন শ্রমমন্ত্রী নিয়োগ পেয়েছেন। দেশটির শ্রমবাজারে শতভাগ সৌদি নাগরিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সৌদির অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পথে সর্বাধিক বিপাকে পড়েছেন কর্মরত বাংলাদেশিরা।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সুমাইয়া ইসলাম আমাদের সময়কে জানান, দেশের প্রধান এই শ্রমবাজারে নারীকর্মীরা যেমন লাঞ্ছিত, পুরুষকর্মীও তেমনই নিগৃহীত। এর দ্রুত উত্তরণ না ঘটলে শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গত মাসেই নির্যাতিতা ৩ শতাধিক নারী দেশে ফিরেছেন। শ্রমনির্ভর এই বাজারে যখন আয়ের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয়, ঠিক তখন দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন এসব বাংলাদেশি।
এদিকে সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগকর্তার দেওয়া অনুমতিপত্র বা আকামা হারিয়ে বর্তমানে অবৈধ হয়ে পড়েছেন বহু বাংলাদেশি অভিবাসী। অনেকে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক রয়েছেন।
জানা গেছে, সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে সেখানকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই বিদেশি কর্মী ছাঁটাই করতে শুরু করেছে। নির্মাণ ও সরবরাহ খাতের ছোটখাটো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোও একই কৌশল নিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি। বৈধভাবে গেলেও নিয়োগকর্তা আকামা নবায়ন না করায় তারা অবৈধ হয়ে পড়ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আটক হওয়া এড়াতে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আকামা সমস্যা সমাধানে প্রতিদিনই সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করছেন এ দেশের শ্রমিকরা। দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে ঢাকায় লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব সমস্যা দূতাবাসের পক্ষে একক উদ্যোগে সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য সৌদি শ্রম দপ্তরের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এদিকে সৌদি আরবে সম্প্রতি জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বিদেশি শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় দেশটি ত্যাগ করছেন। আকামা ইস্যুর ফি ৮-৯ হাজার সৌদি রিয়াল নিয়োগকর্তার বহন করার কথা, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা। কিন্তু কোম্পানিতে কাজ না থাকলে মালিকরা আকামার বিপরীতে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে চান না। ফলে বৈধ শ্রমিকরাও অবৈধ হয়ে পড়েন।