হটাত এ কী – আগামীকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন, তখন তিনি এক অনন্য উচ্চতা স্পর্শ করবেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট পেশ করায় তিনি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের রেকর্ড স্পর্শ করবেন। কিন্তু তার চেয়েও বড় দিক হলো, এটাই সম্ভবত অর্থমন্ত্রী হিসেবে শেষ বাজেট উপস্থাপন করবেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ঘটনা বিরল। আমাদের দেশে যাঁরা রাজনীতি করেন, তারা ‘অবসর’ শব্দটা বিশ্বাস করেন না। বাংলাদেশের রাজনীতির অভিধানে ‘অবসর’ বলে যেন কিছু নেই। সবাই আমৃত্যু ক্ষমতা, সংসদ সদস্যপদ ইত্যাদি আঁকড়ে রাখতে চান। কেবল মৃত্যুই একজন রাজনীতিবিদকে সবকিছু থেকে বিদায় দেয়। কিন্তু আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান দিয়েই অবসরে যাচ্ছেন। তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, এটাই হবে তাঁর শেষ বাজেট। ডিসেম্বরের পর মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্যের দায়িত্ব-এসব কিছু থেকেই ছুটি নেবেন প্রবীণতম মন্ত্রিসভার সদস্য।
কেন এমন সিদ্ধান্ত? এ প্রশ্ন করতেই প্রাণখোলা হাসিতে আলো ছড়ালেন। বললেন, ‘আমার তো এটা দ্বিতীয় অবসর হবে। আমি তো সিভিল সার্ভেন্ট ছিলাম। ৮১ তে রিটায়ার্ড করি। তারপর মনে করলাম, আমার আরও কিছু দেবার আছে। এখন বয়স হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, এখন আমার বিশ্রাম প্রয়োজন। অনেক তো হলো।’
কর্মমুখর এই মানুষটি অবসরে কি করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ‘এসব নিয়ে ভাবিনি। এখন আমার ভাবনা শুধু বাজেটকে ঘিরে।’
আবুল মাল মুহিতের কর্মজীবন তিন ইনিংস। প্রথম ইনিংসে মুহিত ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ পদেই আসীন হয়েছিলেন। সচিব থেকে ৮১ সালে অবসরে যান। কিন্তু তখনো তিনি তরুণ। কর্ম পিপাসা তখনো মেটেনি তাঁর। এসময় এরশাদ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর শুরু হয় তাঁর কর্মজীবনের দ্বিতীয় ইনিংস, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফে।
মুহিতের তৃতীয় ইনিংস শুরু হয় রাজনীতিবিদ হিসেবে। আওয়ামী লীগের টিকিটে ২০০৮ সালে সিলেট-১ থেকে নির্বাচিত হন। এরপর দায়িত্ব পান অর্থমন্ত্রীর। টানা ১০ বছর অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে এক তৃপ্তি নিয়েই যাচ্ছেন তিনি। বললেন‘ আমার কোনো অতৃপ্তি নেই। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে গেছে। আমরা একটা স্বাবলম্বী অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করছি। দারিদ্র মোকাবেলায় সফল হয়েছি। বাংলাদেশ এখন একটা জায়গায় এসেছে। অবসরে গেলে পিছনে ফিরে আমি স্বস্তি পাবো।’ কাজ পাগল মানুষটি বললেন, ‘আমি রাজনীতি থেকে ছুটি নিচ্ছি, কাজ থেকে নয়। অবসরের পর হয়তো দেখবে, আবার নতুন কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছি। কাজ ছাড়া তো একজন মানুষ মৃত। আমি হয়তো নতুন কিছু করে বেছে নেবো, যেটাই নেই তা হবে মানুষের জন্য।’ তার মানে, রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেও কাজ থেকে অবসরে যাচ্ছেন না মুহিত। হয়তো তাঁকে আমরা পাবো, নতুন রূপে। নতুন কিছুর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বেন অদম্য কর্মপ্রাণ এই মানুষটি।