তারেক-আল মামুনের – ২৭ এপ্রিল ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যায় ‘চ্যানেল ওয়ান’। চ্যানেলটির মালিক ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। দু’ বন্ধু ব্যবসায় যেমন ছিলেন অংশীদার, তেমনি দুর্নীতিতে। নানা দুর্নীতির মধ্যে ‘চ্যানেল ওয়ান’ অন্যতম।‘চ্যানেল ওয়ান’ যে শুধুমাত্র বিএনপির রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হত, তা নয়। এই চ্যানেল থেকে হয়েছে নারী কেলেঙ্কারিও। চ্যানেলে সংবাদ পাঠিকা থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান উপস্থাপিকা, সুন্দরী নতুন মুখ নেয়ার প্রয়াস ছিল।
যখন চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেল। আস্তে করে কেটে পড়লো সেই সুন্দরীরা। প্রথম কয়েকদিন চ্যানেল নিয়ে আহাজারি করলেও ধোপে টিকবেন না বলে নিজেরাই থেমে গেছেন। এই যে থেমে গেছে, এমন ভাবনা অনেকের। কিন্তু তাঁরা থেমে নেই। তাঁরা নানাভাবেই তাদের পরিচিত চেহারা ব্যবহার করছেন বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষাদাগার করতে। এর পেছনে কারণও রয়েছ। সুন্দরীরা যে শুধুমাত্র সেখানের চাকরি করতেন এমন নয়। তারেক- মামুনের ঘনিষ্ঠও ছিলেন।
এর মধ্যে এখন সবচেয়ে আলোচনায় আছেন ফারহানা নিশো। ২০১৩ সালে চ্যানেল ওয়ানে সংবাদপাঠিকা হিসেবে তাঁর শুরু। টুকুটাক নাটকেও অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ তিনি একুশে টেলিভিশন থেকে বহিস্কার হয়েছেন। তাঁর অন্তত এক ডজন প্রেমিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। শুরুর দিকে যেমন তার ছিল তারেক-মামুনের সঙ্গে সখ্যতা। পরবর্তীতে শিল্পপতি, সাংবাদিক একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে এ নারীর সম্পর্কের খবর মেলে।
বিএনপির পতন হলেও ক্ষমতার দাপটে সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন।
তার দাপট, ক্ষমতা ও সেচ্ছাচারিতার কাছে সবাই ছিলেন জিম্মি, কার্যত অসহায়। চ্যানেলে নিজের ইচ্ছামতোই নিউজ পড়তেন। আবার নিউজ পড়েই অন্য প্রোগ্রামে অ্যাংকর হিসাবে টিভি স্ক্রিনে লাইভে বসে যেতেন। এভাবেই নিশোর দিন রাত পার হতো। এভাবেই চলে নিশোর সম্রাজ্য।নিশো যে চ্যানেলেই যান। সেখান থেকেই আন্দোলনের মুখে তাঁর বিদায় নিতে হয়। চ্যানেল ওয়ান থেকে শুরু তারপর কখনো বৈশাখি, কখনো যমুনা, কখনো একুশে। নিশোর রয়েছে গুলশানে আগোরার সামনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটসহ আরও অনেক সম্পত্তি।
নিশোর মতো সে সময়ের আরেকজন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপিকা কাজী জেসিন। তিনি এখন বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িতও। তাঁর স্বামী রায়হান আমিন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় রয়েছেন। নেত্রকোনা-৩ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। তাঁর বাবা প্রয়াত নুরুল আমিন তালুকদার নেত্রকোনা-৩ কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের এমপি ছিলেন। এমপি থাকা অবস্থায় তিনি প্রয়াত হলে কাজী জেসিনের শ্বাশুড়ি খাদিজা আমিনও এ আসনে উপনির্বাচনে এমপি হন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, ভাগিনা ডিউক, তারেক জিয়ার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দীন মামুন ও কাজী জেসিন মিলে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে দেশের বিলবোর্ড বাণিজ্য রাতের আঁধারে দখল করে নেন। তাদের এই একচেটিয়া বিলবোর্ড আগ্রাসনেই প্রকৃত বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ীরা পথে বসেন।কোকোর ওই সিন্ডিকেট বিলবোর্ডের ব্যবসার ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ২০০১-এর নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর। রাতের আঁধারে অন্যের বসানো বিলবোর্ড দখলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়।
সে সময়ের আরেকজন সংবাদ পাঠিকা অদিতি সেনগুপ্তও বেশ আলোচিত। স্বামী থাকা অবস্থাতেও তিনি পরকীয়ায় মাতেন মামুনের সঙ্গে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামুন প্রথম স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিনকে ডিভোর্স দেন। শাহিনা গণমাধ্যমে বলেছেন, “প্রতিদিন তার গাজীপুরের প্রাসাদ খোয়াব এ নায়িকা মডেলসহ বিভিন্ন নারীদের নিয়ে ফুর্তি করার খবর পেতাম। কিন্তু যাকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছি সে আমাকে তালাক দিবে তা কোনদিন ভাবিনি। আমিই প্রথম মামুনকে ব্যবসা করার জন্য টাকা দিয়েছিলাম।’
গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি দুর্নীতি, মানিলন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে থাকাকালে প্রথম স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠান।পরবর্তিতে মামুনকে অদিতির মুখোমুখি করা হলে শাহিনাকে অকথ্যভাষায় গালাগালি করে তালাক মেনে নিতে বলেন। কারাগারে থাকাকালেই অদিতিকে বিবাহ করেন মামুন। এরপর শাহিনা মামুনের আরও দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করার কথা উল্লেখ করে সরকারের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। নিকিতা নামে মামুনের আরেক স্ত্রী আছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রঃ বাংলা ইনসাইডার