সৌদি আরবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে আইনি বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির পরিদর্শকরা বলছেন, কারারুদ্ধ মানবাধিকারকর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালাতে রিয়াদ পদ্ধতিগতভাবে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করছে। সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের বিশেষ পরিদর্শন শেষে এমন অভিযোগ তুলেছেন তারা।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ও ব্রিটিশ আইনজীবী বিন এমারসনের নেতৃত্বে পরিদর্শক দলটি দেশটির ঊর্ধ্বতন রাজনীতিবিদ, বিচারক, পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করে সৌদি আরবে তারা কাঠামোগত নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। অনেক দুর্বল মানুষ বছরের পর বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন। বিচার ব্যবস্থার বড় ধরনের অপপ্রয়োগের ফলে কারাগারে আটক আছেন বহু মানুষ।
দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ী সরকারি চাকরিজীবিরা আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন। নাগরিক সমাজকে মুখ বন্ধ রাখতে দমনমূলক পদক্ষেপ ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অভিযোগগুলো নিরসনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ সপ্তাহে প্রথমবারের নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছে সৌদি আরব। আগামী ২৪ জুন থেকে দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। নিজেকে সংস্কার পরিকল্পনার অগ্রদূত হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এরইমধ্যে তিনি নিজের দেশকে মধ্যপন্থী ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে যুবরাজের সংস্কার পরিকল্পনায় সংশয় প্রকাশ করা অধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চালায় সৌদি সরকার। ১৭ জনকে আটকের পর আটজনকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে এই গ্রেফতার অভিযানের আগেই জাতিসংঘের পরিদর্শন শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
এমারসন গার্ডিয়ানকে বলেছেন, বিগত কয়েক দশকের মধ্যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অধীনে সৌদি আরব রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর সবচেয়ে নির্মম নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে যেমন নারীদের জন্য প্রথম ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর করা হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে এই সাধারণ সংস্কারের জন্য প্রচারণা চালানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এমারসন বলেন, ‘সৌদি আরবের যে ব্যাপকভিত্তিক উদারনৈতিক প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা আসলে প্রতীকি। গত দুই বছর ধরে জনজীবনের সর্বত্র রাজতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ব্যাপারে ভয়াবহ দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে সৌদি আরবের অন্তর্ভুক্তি লজ্জাজনক।
বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে স্বাধীন কোনও বিচারব্যবস্থা না থাকায় যে কোনও বিদেশি বিনিয়োগ বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এমারসন বলেন, সৌদি বিচারব্যবস্থা এখন সম্পূর্ণভাবে বাদশাহের নিয়ন্ত্রণে। নির্বাহী প্রশাসনের স্বাধীনতার কোনও রকমের আভাস নেই। দেশটিতে ক্ষমতার কোনও বণ্টন নেই, মত প্রকাশের কোনও স্বাধীনতা নেই, মুক্ত সংবাদমাধ্যম নেই, কার্যকর শ্রমিক ইউনিয়ন নেই, এমনকি কার্যকর নাগরিক সমাজও নেই।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক কারাবন্দির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন পরিদর্শক দলের প্রধান এমারসন। তবে রিয়াদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের পাওয়া যায়নি অথবা এমারসনের কার্যপরিধির আওতায় তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ পড়ে না।