সৌদি আরবের আপত্তি সত্ত্বেও কাতারের কাছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-ফোর হান্ড্রেড বিক্রি করবে রাশিয়া।
কাতারের কাছে এস-ফোর হান্ড্রেড ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তে রাশিয়ার অবস্থান পরিষ্কার করে এসব কথা জানিয়েছেন রুশ সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্য ও প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কমিটির উপ-চেয়ারম্যান আলেক্সেই কন্দ্রাতিয়েভ। দেশটির স্পুটনিক নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি।
কাতারকে ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্তে রাশিয়ার সুদৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে ওই অঞ্চলে প্রভাবশালীর ভূমিকা পালন করছে রিয়াদ। আর রাশিয়ার এস-ফোর হান্ড্রেড ব্যবস্থা কেনার পর কাতার সামরিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। এটার কারণেই চিন্তিত হয়ে পড়েছে সৌদি।
কন্দ্রাতিয়েভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই রাশিয়ার সঙ্গে কাতারের চুক্তিতে চাপ দিতে সৌদিকে উৎসাহিত করে। এছাড়া কাতারের কাছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রির মাধ্যমে অস্ত্র বিক্রির একটি আকর্ষণীয় বাজার হারানোর শঙ্কায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুমকির পরই কাতারের সঙ্গে এস-ফোর হান্ড্রেড ব্যবস্থা বিক্রির ইস্যুতে মন্তব্য করলো রাশিয়া।
রাশিয়ার মন্তব্যের একিদন আগে ফ্রান্সের প্রভাশালী দৈনিক ল্য মণ্ডে এক প্রতিবেদনে জানায়, কাতার যদি রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবে তাদের ওপর সামরিক পদক্ষেপসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ।
এছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে লেখা একটি চিঠিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ব্যাপারে বাধা দিতে কাতারের ওপর ফ্রান্সকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান সৌদি বাদশাহ। এসময় ম্যাক্রোঁকে সৌদি বাদশাহ জানান, কাতারের এমন সক্ষমতা সৌদির নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মাধ্যমে সৌদি বাদশাহর চিঠি পাওয়ার দাবি জানিয়ে ল্য মন্ডে জানায়, কাতারের প্রতিরক্ষা খাতে এমন সক্ষমতা ধ্বংস করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন সৌদি বাদশাহ।
গত বছরের অক্টোবরে সামরিক ও কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে কাতার। সেই চু্ক্তি অনুসারে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-ফোর হান্ড্রেড কিনছে কাতার।
গত বছরের একই সময়ে রাশিয়া সফর করেছিলেন সৌদি বাদশাহ সালমান। সে সময় রাশিয়ার সঙ্গে একইধরনের চু্ক্তি করেছিলো সৌদি আরবও।
কাতারের সঙ্গে শুরু থেকেই সম্পর্কে ঘাটতি রয়েছে সৌদি আরবের। তবে তা প্রকাশ্যে আসে গত বছর কাতারের ওপর চারটি আরব দেশের (সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত) নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। মনে করা হয় এই নিষেধাজ্ঞার নেতৃত্বে ছিলো সৌদি। তবে নিষেধাজ্ঞার তিনমাস পরই আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে তা প্রত্যাহার করা হয়।
এরই জের ধরে গত ২৬মে ওই চার দেশের পণ্য বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কাতার। এছাড়া দোকানের তাক থেকেও ওই চার দেশের পণ্য সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। এতে জটিলতা আরও বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া প্রায় এক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে অনলাইন যুদ্ধ চলছে। তারা এ যুদ্ধের জন্য বেছে নিয়েছেন ইন্টারনেট বট, ভুয়া সংবাদ ও হ্যাকিং। ইন্টারনেট বট আসলে ওয়েব রোবট, যা আসলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইন্টারনেটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে।