এই গল্পটা ভালোবাসার, গল্পটা আবেগের, আবার গল্পটা বাড়াবাড়িরও বলা চলে! অভাবের সংসারে নিত্য ভালো খাবারের আয়োজন ছিলো না, ভালো পোশাক বা অন্য কোনো শখও পূরণ হয়নি ঠিকমতো। অথচ কলকাতার এই দম্পতি হাত ধরাধরি করে মাঠে গিয়ে দেখেছেন নয়টি বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা! এবার তারা রাশিয়াতে গিয়ে দেখতে চান দশম বিশ্বকাপ। আর এটাকেই তারা ধরে নিয়েছেন মাঠে গিয়ে দেখা শেষ বিশ্বকাপ হিসেবে। মনের আকাঙ্খা থাকলেও বয়স যে রশি টেনে ধরেছে।
১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপ টিভিতে প্রথম সরাসরি সমপ্রচার দেখেছিল কলকাতাবাসী। পান্নালাল ও চৈতালি কিন্তু টিভির পর্দায় আটকে থাকতে চাননি। সে সময় লন্ডনে তাঁদের এক বন্ধু থাকতেন। তিনিই তাঁদের স্পেন বিশ্বকাপের কয়েকটা ম্যাচের টিকিট পাঠান। গ্যালারি থেকে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখে নেশা ধরে যায় চট্টোপাধ্যায় দম্পতির। মনে মনে ঠিক করে ফেলেন, শরীর ও মনের জোর যতদিন থাকবে দুজনে মিলে বিশ্বজুড়ে বিশ্বকাপ দেখে বেড়াবেন। তারপর পেনশনের টাকা থেকে একটু একটু করে সঞ্চয় শুরু।
এ বিষয়ে পান্নালালবাবু বলছেন, ‘২০২২ বিশ্বকাপের সময় আমার নব্বইয়ের কাছাকাছি বয়স হয়ে যাবে। মনে ইচ্ছে থাকলেও শরীর হয়তো তখন আর বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার ছাড়পত্র দেবে না। তাই মনে হচ্ছে, রাশিয়া বিশ্বকাপেই আমরা শেষবার গ্যালারিতে বসে ম্যাচ দেখব।’
পাশে বসে তাঁর স্ত্রী তখন চোখ মুছতে মুছতে বলেন, জানেন, এই ন’টা বিশ্বকাপ দেখার জন্য আমাদের কতটা কষ্ট করতে হয়েছে! অনেক সময় সাধ হলেও আমরা ভাল ভাল খাবার আনিয়ে খেতে পারিনি। ভাল জামাকাপড় কিনতে পারিনি। একটা নির্দিষ্ট ছকে বাধা বাজেটে জীবন চালিয়েছি। যাতে আমাদের বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার জন্য জমানো টাকায় হাত না পড়ে।
১৪ জুন রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন তাঁরা। নক-আউট পর্বের টিকিট না পেলে ফিরে আসবেন ২৮ জুন। বিশ্বকাপের সব ম্যাচের টিকিট চেয়ে রাশিয়ান কনস্যুলেট ও ফিফার অরগানাইজিং কমিটিকে চিঠি লিখেছেন পান্নালাল। কিন্তু এখনও উত্তর আসেনি। চৈতালি বলছিলেন, অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময় আমরা সব ম্যাচের টিকিট পেয়েছিলাম। ফিফার লোকাল অরগানাইজিং কমিটি সহযোগিতা করেছিল। এমনকী, আমাদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওরা গাড়ি পাঠিয়েছিল। তার পর মাঠে আমাদের জন্য ডিনারের ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু এবার আমরা মাত্র তিনটে ম্যাচের টিকিট যোগাড় করতে পেরেছি। আশা করছি ফিফা আমাদের অনুরোধ রাখবে।