আর মাত্র ১২ দিন পর সেরা ফুটবলাররা বিশ্ব মাতাবেন। রেফারির বাঁশির সুরে শুধু যে মেসি-রোনালদো আর নেইমাররাই কেবল গ্যালারী নাচাবেন তা নয়, অনেক তরুণ প্রতিভারাও জ্যোতি ছড়াতে পারেন এবার! তাদের মধ্যে ফ্রান্সের ওসমান ডেমবেলের অন্যতম। বার্সার ইতিহাসে সবচেয়ে দামী ফুটবলার ছিলেন এ তরুণ। তিনি ফুটবল পায়ে চমক দেখাতে খুব ভালবাসেন। তাই জন্যে গোটা বিশ্ব তাঁকে ডাকে ?ওয়ান্ডার কিড? বলে। কিন্তু বার্সিলোনায় আসার পর থেকে এখনও কোনও ওয়ান্ডার দেখাতে পারেননি। আসন্ন বিশ্বকাপে তাঁর দেশের হয়ে প্রত্যেক ম্যাচে নামবেনই, এমন গ্যারান্টিও দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ওসমানে ডেমবেলের মধ্যে সমস্তরকম সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বকাপের অন্যতম তারকা হয়ে ওঠার। উত্তর ফ্রান্সের ভার্ননে জন্ম ওসমান ডেমবেলের। বাবা-মা দু’?জনেই জীবিকার স্বার্থের পশ্চিম আফ্রিকার মরিশানিয়া থেকে চলে এসেছিলেন ফ্রান্সে। ছোটবেলায় প্রচ- চুপচাপ ছিলেন ডেমবেলে। কিন্তু ফুটবল বলতে পাগল। এতটাই যে ছোটবেলায় বাবা-মাকে নাকি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, পড়াশুনা করতে চান না। শুধু ফুটবলই খেলতে চান। অবাক হয়েছিলেন ওসমানে সিনিয়র এবং ফতিমাতা। কিন্তু ছেলের আগ্রহ দেখে খুশিও হয়েছিলেন। তার অন্যতম কারণ, ওসমানে ভাই-বোন পড়াশুনায় অত্যন্ত ভাল ছিলেন। তাই পরিবারের ছোট ছেলে তাঁর পছন্দসই কাজই করুক, এটাই ছিল ডেমবেলের বাবা-মায়ের ইচ্ছা।মাত্র ছ’বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে রেনেসে চলে এসেছিলেন তার কাকা সামবাগের সঙ্গে থাকতে। সামবাগ পেশাদার ফুটবলার ছিলেন। ছোট ডেমবেলের কাছে তার কাকাই তখন ছিলেন রোলমডেল। কাকার কাছ থেকেই ফুটবলে হাতেখড়ি। মাত্র সাত বছর বয়সেই স্থানীয় ম্যাডেলেন এভ্রিক্স ক্লাবের ইউথ অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে যান। সেই শুরু। ২০১০-এ ডেমবলে যোগ দেন রেনেসের দ্বিতীয় ডিভিশনে। এরপর প্রথম ডিভিশনেও খেলেন। ফ্রান্সের ঘরোয়া লিগে রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। থিয়েরি অঁরি এবং অ্যান্থনি মার্শিয়ালের পরে তরুণতম ফুটবলার হিসেবে ১০ গোলের গন্ডি টপকান। ছ’?বছর রেনেসে কাটানোর পরে ডেমবেলে যোগ দেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে।এর মধ্যেই ডেমবেলের নামের সঙ্গে অনেকের তুলনা শুরু হয়ে গেছে। কেউ কেউ তাঁকে নেইমারের সঙ্গে তুলনা করছেন। আবার কেউ বলছেন তরুণ বয়সের রোনাল্ডো। ডর্টমুন্ডে আসার পরে তৎকালীন কোচ পিটার বস্?জ তাঁকে একটু পিছন থেকে খেলাতে শুরু করেন। ফলও পান। ৫০ ম্যাচে ১০ গোল করলেও, ডেমবেলের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করেননি, ডর্টমুন্ডে এমন ফুটবলার খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল। মোট ২১টা অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। ডেমবেলের উত্থান চোখে পড়েছিল বার্সিলোনার। নেইমার আচমকা চলে যাওয়ায় তাঁর পরিবর্ত খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছিল বার্সা। হাতে টাকাও ছিল। তাই প্রচুর অর্থের বিনিময়ে ডেমবেলেকে তুলে নেয় তারা। তবে স্প্যানিশ ক্লাবে আসার পরে সেভাবে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ডেমবেলে। তা ছাড়া, তাঁকে প্রথম দলে ঢোকানোর মতো জায়গাও ফাঁকা নেই। বরং, ফিলিপে কুটিনহো এসে অনেকটাই নেইমারের খামতি মিটিয়ে দিয়েছেন। ফলে সামনের মরশুমে তাঁকে অন্য কোনও ক্লাবে লোনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এমনটাই মত অনেকের। সেই সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্যে বিশ্বকাপটাই সেরা মঞ্চ ডেমবেলের।