নিজেকে পরিচয় দিতেন সৌদি যুবরাজ বা রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে। মায়ামির রাস্তায় তাকে দেখা যেত দামি স্পোর্টস কার নিয়ে ঘুরতে। হাতে রোলেক্স ঘড়ি। নাম বলতেন ‘সুলতান বিন খালিদ আল সৌদ’। ফিশার আইল্যান্ডে মায়ামি সমুদ্রসৈকত লাগোয়া অভিজাত পেন্টহাউস অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। সেখানে যাতায়াতই করতে হয় ফেরি অথবা হেলিকপ্টারে। মূল দরজাতে লেখা রয়েছে ‘সুলতান’।
ক্ষমতাসীন সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই ‘সুলতান’ আসলে কে? যে পরিচয় দিয়ে লাখ লাখ ডলার তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন।
‘সৌদি যুবরাজের’ আসল নাম অ্যান্থনি জিনিয়াক (৪৭)। তার জন্ম কলম্বিয়ায়। ১৯৭০-এর দশকে গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ও তার ভাই ড্যান দুই বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন। ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ন্যান্সি ও জেমস জিনিয়াক দম্পতি তাদের দত্তক নেন। তাদের সাহচর্যে বেড়ে ওঠেন জিনিয়াক। স্কুলেও সহপাঠীদের বলতেন, তাদের অভিজাত রিসোর্ট বা অবকাশযাপনের স্থান রয়েছে। এমনকি নিজেকে জনপ্রিয় অভিনেতা ডম ডিলুইসের সন্তান হিসেবেও পরিচয় দিতেন।
অষ্টম গ্রেডে পড়ার দত্তক নেওয়া বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর থেকে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় জিনিয়াকের। এক বছর মানসিক হাসপাতালেও কাটাতে হয়েছে তাকে। ১৭ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন তিনি।
সৌদি আরবের কূটনৈতিক নম্বর প্লেট ফেরারি বা রোলস রয়েসে লাগিয়ে এত দিন ঘুরতেন।
শেষ পর্যন্ত এই প্রতারক নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল আদালতে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নির কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ‘মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্যদের বলতেন যে তিনি কূটনৈতিক নিরাপত্তা পান এবং কয়েক ঘণ্টা অন্তর তাকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেখা করতে হয়।’ জিনিয়াককে দামি চিত্রকর্ম, অলঙ্কার উপহার দিত লোকজন। আগামী ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।
১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকেই জিনিয়াক ফ্লোরিডায় বসবাস করছেন। গত নভেম্বরে ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে তিনি লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক ভ্রমণ করলে ধরা পড়েন।
অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশি করে বিভিন্ন কার্ড পেয়েছে তদন্তকারী দল। এসব কার্ডে, ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’, ‘প্রিন্স’ ও ‘সুলতান’ লেখা রয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর জিনিয়াককে মায়ামির কারাগারে রাখা হয়েছে।