জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের চার জন শান্তিরক্ষীসহ বিশ্বের ৩৭টি দেশের ১২৮ জন আত্মোৎসর্গকারী শান্তিরক্ষী কর্মীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করেছে জাতিসংঘ।
শুক্রবার (১ জুন) জাতিসংঘ সদর দফতরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের এ পদক দেওয়া হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বাংলাদেশসহ ৩৭টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে এই মেডেল তুলে দেন।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ হলেন, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক মো: আব্দুর রহিম, ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মালি মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সিপাহী মো: মনোয়ার হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল মো: জাকিরুল আলম সরকার ও সার্জেন্ট মো: আলতাফ হোসেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মেডেল গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদসহ জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মহাসচিব গুতেরেজ কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী সামরিক ও বেসামরিক শান্তিরক্ষী কর্মীর বিদেহী আত্মার স্মরণে জাতিসংঘ সদর দফতরের পিসকিপিং মেমোরিয়াল সাইটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আত্মদানকারী শান্তিরক্ষীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বলেন, “আজ থেকে ৭০ বছর আগে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রথম মিশন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৩৭০০ জনেরও বেশি সামরিক, পুলিশ ও বেসামরিক শান্তিরক্ষা কর্মী কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছে। এ সকল শান্তিরক্ষীগণ অন্যদের জীবন রক্ষা করার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা সারা জীবন তাদের কাছে ঋণী এবং তাঁরা সবসময়ই আমাদের অন্তরে গভীর মমতায় প্রোথিত থাকবে”।
কর্মক্ষেত্রে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “আমি জাতিসংঘের সকল কর্মীদের বিশেষ করে সম্মুখ সারিতে নিয়োজিত সৈনিকদের সুরক্ষার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”। তিনি বিশ্ব শান্তির জন্য জীবনদানকারী এসকল শান্তিরক্ষী কর্মীদের সর্বোচ্চ অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
জাতিসংঘ নিযুক্ত সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৪৩ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন।