মাহাথির মোহাম্মদের ডাকে সাড়া দিয়ে মালয়েশিয়ার জনগণ তাদের দেশের জন্য যা করছে তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের ডাকে সাড়া দিয়ে চাঁদা তুলে দেশের ঋণ শোধ করছে দেশটির জনগণ। এ বিষয়ে সরকারের এক ঘোষণার পর মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ২০ লাখ ডলার গণতহবিল গঠিত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে এ ঘটনা। বৈদেশিক ঋণ শোধে মালয়েশিয়ার এ ‘গণতহবিল মডেল’ অনুসরণ করা যায় কিনা সে আলোচনায় মুখর টুইটার-ফেসবুক।
সরকারের এ উদ্যোগ শুরু হয় ২৭ বছর বয়সী এক মালয়েশীয় দেশপ্রেমিক নাগরিকের হাত ধরে। বৈদেশিক ঋণ শোধে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তহবিল গঠন শুরু করেন ওই ব্যক্তি।
এরপরই দেশটির অর্থমন্ত্রী লিম গুয়ান ইং বলেন, মালয়েশিয়ার বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমাতে দেশের নাগরিকেরা তাদের আয় থেকে অর্থ দিতে চায়।’
এরপর গণতহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি। একইসঙ্গে একে তিনি ‘পদ্ধতিগত ও স্বচ্ছ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করার প্রতিশ্র“তি দেন। ১ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিতেরও বেশি ঋণ রয়েছে মালয়েশিয়ার। দায়িত্ব নেয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর ২১ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমবার আলোচনায় এ তথ্য জানান মাহাথির মোহাম্মদ।
দেশের এ অবস্থার জন্য দুর্নীতি মামলায় তদন্তাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বে থাকা প্রশাসনকে দায়ী করে তিনি বলেন, দেশের অর্থ অপচয় করা হয়েছে। যে কারণে আমাদের এখন ঋণ পরিশোধে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ঋণের অংক ১ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিত ছাড়িয়ে গেছে।
মাহাথির আরও বলেন, আমরা এর আগে কখনই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করিনি। এর আগে কখনই ৩০ হাজার কোটি রিঙ্গিতের বেশি ঋণী হইনি আমরা। কিন্তু এবার তা ১ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিত ছাড়িয়েছে গেছে। নাজিব সরকার জিএসটির মাধ্যমে চলতি বছর ৪ হাজার ৩৮০ কোটি রিঙ্গিত (১ হাজার ১০৫ কোটি ডলার) আহরণের পরিকল্পনা করেছিলেন।
এটি দেশের আহরিত মোট রাজস্বের প্রায় ১৮ শতাংশ। নির্বাচনী প্রচারণায় নাজিব সতর্ক করে বলেছিলেন, মাহাথিরের অর্থনৈতিক প্রস্তাবনাগুলোর কারণে দেশে ঋণ বেড়ে ১ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিতের বেশি হয়ে যাবে।
এছাড়া নিজের মেয়াদে কেন্দ্রীয় ঋণ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার অভিযোগ নাকচ করে নাজিব বলেন, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত জিডিপির অনুপাতে দেশের ঋণ ছিল ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ, যা সরকার নির্ধারিত ৫৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।
গত সপ্তাহে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সাবেক প্রশাসনের দেয়া অনেক তথ্যই মিথ্যা। উল্লেখ্য, ৯ মে মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বে বিরোধী দল পাকাতান হারাপান বিজয় অর্জন করেন।