ছাদখোলা ‘চ্যাম্পিয়ন’ বাসের চালক যা বললেন

দেশের দেউলিয়া পরিস্থিতিতে শ্রীলংকার এশিয়া কাপ জয়ের উল্লাসটা ছাপিয়ে যায় সবকিছুকেই। ছাদখোলা দোতলা বাসে দাসুন শানাকাদের বরণ করে নেয় লঙ্কানরা।

সেই উচ্ছ্বাসটা ভালো লাগে সাফ ফুটবলজয়ী তারকা সানজিদার। আর তার ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়েই প্রথমবারের মতো ছাদখোলা বাসে বিজয়ীদের সংবর্ধনা দিল বাংলাদেশ।

হিমালয় কন্যাদের হারিয়ে দেশে পা রাখলেই বুধবার বাঘিনীদের নিয়ে বেলা সাড়ে ৩টায় বাফুফের উদ্দেশে রওয়ানা হয় ছাদখোলা বাস। সাবিনাদের ‘চ্যাম্পিয়ন’ বাসে উঠেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপিসহ অন্যরা।

বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ধীর গতিতে চলে সেই ছাদখোলা বাস।

সাবিনাদের কৃতিত্ব ও ছাদখোলা বাস নিয়ে উচ্ছ্বাসের ভিড়ে ঢেকে গেছেন বাসের চালক। যিনি দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার বেশি সময় বাসটি চালিয়ে সাফবিজয়ীদের বাফুফে ভবনে নিয়ে যান। অনেকেই জানেন না তার নাম।

ছাদখোলা বাসের ড্রাইভারের নাম আব্দুল কালাম। তিনি নিজেও উচ্ছ্বাসিত গর্বিত ও স্মরণীয় দিনটির স্বাক্ষী হতে পেরে। চালক হিসাবে ২১ সেপ্টেম্বরকে তার ক্যারিয়ারের সেরা দিন হিসেবে উল্লেখ করলেন।

বাসচালক আব্দুল কালাম বলেন, ‘আমার ড্রাইভিং জীবনের অন্যতম সেরা দিন। আমি ভাবতেও পারিনি, নারী ফুটবলাররা সাফ ফুটবল জিতে আসবে আর আমি তাদের চালক হিসাবে বহন করে নিয়ে যাব… এটা কোনোদিন কল্পনাও করিনি।’
তিনি বলেন, বাসটার ছাদ খুলতে ও সাজানোর সময়টিও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এক রাতেই কত পরিশ্রম আর আন্তরিকতা দেখিয়েছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা, শ্রমিকরা। গোটা একটা বাসের ছাদ কেটে সেটাকে পরিপাটি করা আর বসার উপযোগী একরাতে করা কঠিন। সবার আন্তরিকতায় সেটা সম্ভব হয়েছে।

এমনটা বলাই স্বাভাবিক। আর সব দিনের মতো বাস চালাননি আব্দুল কালাম। তার বাসকে ঘিরে এতো সব আয়োজনও হয়নি কখনও।

দিন শেষে সাবিনা, মারিয়া, কৃষ্ণাদের কীর্তন গাইলেও অনেকে ছাদখোলা বাসচালকের প্রশংসাও করেছেন।

বুধবার আব্দুল কালামের ছাদখোলা বাসের আগে-পরে ছিল নিরাপত্তা বাহিনী, মিডিয়ার গাড়ি ও অনেক উৎসাহী ফুটবলপ্রেমী। রাস্তার দুধারে হাজারও মানুষ। কেউ গাড়িতে, কেউ দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন।

অনেকে ভিডিও ধারণ করছেন। অনেকে সেলফি তুলছেন। ফুটওভার ব্রিজগুলোতে দাঁড়িয়ে অভিবাদন দিচ্ছেন পথচলতি মানুষ। বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে সাবিনা-কৃষ্ণারা আনন্দে নেচে-গেয়ে জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়ানো হাজারও মানুষের ভালোবাসার প্রত্যুত্তর দিয়েছেন।

বিমানবন্দর থেকে কাকলী হয়ে মহাখালী ফ্লাইওভার ব্যবহার করে জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পর বিজয় সরণিতে এসে তেজগাঁও হয়ে পুনরায় ফ্লাইওভার দিয়ে মৌচাক হয়ে কাকরাইলে পৌঁছায় আব্দুল কালামের বাস। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে বাফুফে ভবনে যান চ্যাম্পিয়নরা।