বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফল যে ৫ বিষয়ের ওপর নির্ধারিত হতে পারে

চলমান এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা নিজেদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আজ মুখোমুখি হচ্ছে।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দুই দলই আফগানিস্তানের কাছে হেরে এখন কোণ্ঠাসা পরিস্থিতিতে আছে।

দুই দলের জন্যই আজকের ম্যাচটি ‘বাঁচা-মরার লড়াই।’ জিতে গেলে সুপার ফোরে জায়গা পাবে, হারলে এখানেই শেষ এশিয়া কাপ ২০২২।

বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে নামার কথা রয়েছে দুই দলের।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছে, এটা নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে।

ব্যাটিং নেয়ার পর বাংলাদেশের টপ অর্ডার পাওয়ার-প্লেতে রান তুলতে পারেনি তেমন, উইকেটও দিয়ে এসেছে সহজেই।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কিংবা শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে দেখা গেছে, ব্যাটিং লাইন আপ যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়ার পরেও টসে জিতে ফিল্ডিং নিচ্ছে দলগুলো।

এই ধরনের উইকেটে যত সময় যায়, তত ব্যাট করার জন্য সহজ হয়।

আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিজেদের লক্ষ্য জানা থাকলে ব্যাটিং কৌশল ঠিক করে মাঠে নামা যায়, তাই টসে জিতে বোলিং নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আবার ব্যাটিং নিলেও শুরু থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট না খেলতে পারলে শেষ পর্যন্ত ডিফেন্ড করার মতো রান করতে পারে না বাংলাদেশ।

ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি বলেন, ‘বাংলাদেশের শক্তি অনুযায়ী চিন্তা করতে হবে।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ গত কয়েকদিন ধরেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথা বলা হচ্ছে, ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থেকে শুরু করে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সবাই বলছেন যে ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’ খেলতে চাই।

হুসেইন মনে করছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এই তত্ত্বটার মূল অর্থ ধরতে পারছে না। তারা ভাবছে সব ভেঙেচুড়ে দিতে হবে। কিন্তু না, ভয়ডরহীন ক্রিকেটও অনেক টেকনিক্যাল ব্যাপার আছে। পরিকল্পনা আছে।

উদাহরণ হিসেবে আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ের কথাই বলেন তিনি, শুরু থেকে বাংলাদেশ যেভাবে বোলিং করেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাতে আফগানিস্তান ঠিক সুবিধা করতে পারেনি।

‘আফগানিস্তান কিন্তু মারা শুরু করেছে ১৪-১৫ ওভারের পরে, কারণ ওরা জানে উইকেট হাতে থাকলে তখন লক্ষ্য তাড়া করা সহজ হয়।’

শ্রীলঙ্কার দলে আছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের নিলামে ঝড়তোলা অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

নিলামে ১০ কোটি রুপির বেশি দাম উঠেছিল এই লেগ স্পিনার অলরাউন্ডারের।

ব্যাট হাতে এখনো সামর্থ্যের শতভাগ দিতে পারেননি হাসারাঙ্গা।

এমনকি গত ৬ ম্যাচে ২০ রানও পার করতে পারেননি তিনি।

কিন্তু বল হাতে দুর্দান্ত।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে লেগস্পিনারদের গুরুত্ব এমনিই বেশি, ৩৬ ম্যাচ খেলে ৬২ উইকেট নিয়েছেন হাসারাঙ্গা।

গড় ১৪ এর একটু বেশি। হাসারাঙ্গা ওভার প্রতি সাতের নিচে রান দিয়েছেন, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ দলকে চাপে রাখতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশ এই ধরনের বোলারদের ভালো একটা স্পেলেই দিশেহারা হয়ে পড়ে, যেমন প্রথম ম্যাচে শুরুতে মুজিব উর রহমান ও পরে রশিদ খানের বলে হয়েছে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলাটা আরেকটু সহজ হবে, বাংলাদেশের সাকিব ও মুস্তাফিজ ছাড়া তেমন কোনো ভালো বোলার নেই।’

ব্যাপারটা খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ ক্যাম্প।

প্রথমে মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘কে কেমন সেটা মাঠে দেখা যাবে।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে দলের ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আমি তো শ্রীলঙ্কার কোনো বোলারই দেখিনা।’

মাহমুদ মনে করেন, বাংলাদেশের অন্তত বলার মতো দু’জন আছে।

শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দুই দলই এমন একটা অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছে, তারা প্রথম ছয় ওভার হাত খুলে ব্যাটই করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কিন্তু পাওয়ারপ্লেতে শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেট হারিয়েও ৪১ রান তুলতে সমর্থ হয়েছে।

যেখানে বাংলাদেশ তুলেছে ২৮।

যদিও শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানে গুটিয়ে গেছে।

কিন্তু প্রথম ছয় ওভার কাজে লাগানো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যা দুই দলই ভালোমতো পারেনি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের নাজিবুল্লাহ জাদরান ৬টি ছক্কা মেরেছেন এক ম্যাচে, বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানরা মিলে শেষ তিনটি টি-টোয়েন্টি আর্ন্তজাতিক ম্যাচে মাত্র ৫টি ছক্কা মেরেছেন।

আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চার ছক্কার বাইরে অনেক হিসেব থাকলেও, ছক্কা মেরে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো ক্রিকেটার প্রয়োজন হয়ে থাকে, যেমনটা বাংলাদেশে দেখা যায় না।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত একটি ছক্কা মেরে ম্যাচের মোমেন্টাম কিছুটা হলেও ধরে রাখার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের দিকে, পরবর্তীকালে তিনি ৩১ বলে ৪৮ রানের একটা ইনিংস খেলেন।

যেটা দলকে অন্তত ১২০ পার করতে সাহায্য করেছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা ছক্কা মারার মতো ব্যাটই করেননি।