বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনীত করেছে মালয়েশিয়া সরকার। এদের অধীনে রাখা হবে ১০টি করে সহযোগী কম্পানি। সব মিলে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে নিযুক্ত থাকছে মোট ২৭৫টি কম্পানি। এর আগে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল ১০টি কম্পানি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দিকনির্দেশনা বজায় রাখাসহ বিদেশি কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণের স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া। গতকাল রবিবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এক হাজার ৫২০টি এজেন্সির তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। আগেই ২৫টি এজেন্সিকে মনোনীত করা হয়েছিল। তালিকা থেকে নতুন করে ২৫০টি এজেন্সিকে বেছে নেওয়ার কথা জানিয়েছে মালয়েশিয়া। সারাভানান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় শ্রম সমস্যা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। কেননা শ্রমবাজার ইস্যু আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। ’ মন্ত্রী বলেন, প্রথমত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় শুধু ২৫টি কম্পানির সঙ্গে লেনদেন করবে। এগুলো একটি কাঠামোর মধ্যে কাজ করবে।
এসব কম্পানিকে মন্ত্রণালয় থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে, যাতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দিকনির্দেশনাগুলো মেনে শ্রমিকদের কল্যাণ মেনে চলা হয়, বিশেষ করে বিদেশি কর্মীদের জীবনযাত্রা ও কাজের অবস্থানের ক্ষেত্রে। যে ২৫০ কম্পানি কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত হবে, তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ এবং মন্ত্রণালয়ের শর্ত পূরণের নিশ্চয়তা থাকবে ২৫ কম্পানির হাতে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, ২৫টির আগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে ১০টি কম্পানি যুক্ত ছিল। কর্মীদের কল্যাণ ও জীবিকা রক্ষার জন্য মনোনীত ২৫টি কম্পানিতে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স মেকানিজম’ প্রয়োগ করা হয়েছে। কর্মীদের কল্যাণেই ১০টি থেকে কম্পানির সংখ্যা ২৫টি করা হয়েছে।
এখন থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আসতে হবে বলেও জানান মালয়েশিয়ার মন্ত্রী। তিনি আরো জানান, বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ওয়ানস্টপ সেন্টার চালু করা হয়েছে, যা আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। মালয়েশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে বিরাজমান শ্রমিকসংকট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এখন সংশ্লিষ্ট কম্পানির দায়িত্ব হলো মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কর্মীদের জন্য ‘লেভি’ পরিশোধ করা এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করা, যাতে কম্পানিগুলো নতুন উদ্যোগের ফল পেতে পারে।
বিবৃতির শুরুতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আমার বক্তব্য ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাতে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কর্মপরিবেশের উন্নতির জন্য আমার মন্ত্রণালয়ের নেওয়া উদ্যোগগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। ’
গত ২ জুন ঢাকায় এসে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী সারাভানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে যৌথ পরামর্শসভা করেন। সেখানে চলতি জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার পরে সেদিন সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘প্রথম বছরেই দুই লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। এ ছাড়া পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের চাহিদা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী আশা করি পাঁচ লাখ কর্মী আমরা দ্রুত পাঠিয়ে দিতে পারব। ’