কে হচ্ছেন নতুন টেস্ট অধিনায়ক

ব্যক্তিগত এবং দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে স্বেচ্ছায় টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুমিনুল হক সৌরভ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেই টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মুমিনুল।

আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দলকে কে নেতৃত্ব দেবেন তা জানা যাবে বৃহস্পতিবার বিসিবির বোর্ড সভা শেষে। এমনটিই জানিয়েছেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু। সংবাদমাধ্যমকে টিটু বলেন, বৃহস্পতিবার ক্রিকেট বোর্ডের সভা আছে, সেই সভায় বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সবার সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তার আগে বলা মুশকিল কে হচ্ছেন টেস্ট দলের অধিনায়ক।

এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদমাধ্যমকে বিসিবির এই পরিচালক বলেন, আমরা তো অবশ্যই চাইব অভিজ্ঞ একজনের কাঁধে টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিতে। দেখা যাক, বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেয়।

সাকিব আল হাসান: ২০১৯ সালে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার কারণেই আকস্মিকভাবে নেতৃত্ব পেয়েছিলেন মুমিনুল। অনেকটা আপদকালীন অধিনায়ক থেকে হয়ে যান স্থায়ী। এরপর তার অধীনে এই আড়াই বছরে বাংলাদেশ খেলেছে ১৭ টেস্ট। সাকিব নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পরও তাকে নেতৃত্বে ফেরানোর আলোচনা সেভাবে জোরালো হয়নি।

মূলত সাকিবকে নিয়মিত টেস্টে পাচ্ছিলই না বাংলাদেশ। সাকিবের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর বাংলাদেশ খেলেছে ১৩ টেস্ট, যার কেবল ৫টিতে খেলেছেন সাকিব। কখনো চোট, কখনো আইপিএলের কারণে বিরতি, কখনো আবার পারিবারিক কারণে তাকে পাওয়া যায়নি। টেস্ট খেলার অনীহার কথাও তিনি একাধিকবার জানিয়ে আসছেন।

যেকোনো বিচারে নেতৃত্বে সাকিবই হতেন প্রথম পছন্দ। কিন্তু তাকে সব খেলায় পাওয়া যাবে কিনা, এই অনিশ্চয়তাই যে দূর হয়নি। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে, এই জায়গাতেই আটকে গেছেন। সর্বশেষ অধিনায়ক থাকার সময়ও সাকিব একাধিকবার অধিনায়কত্ব উপভোগ না করার কথা বলেছিলেন।

শোনা যাচ্ছে, সাকিব এবার অধিনায়কত্ব নিতে ইচ্ছুক। সেটা যদি হয়েই তাকে তাহলে অন্তত তিন বছর টানা খেলার গ্যারান্টিও দিতে হবে তাকে। সাকিবের অধিনায়ক ফেরার পথে একমাত্র বাধাও এখানে।

লিটন দাস: কিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাস সাম্প্রতিক সময়ে আছেন দারুণ ছন্দে। টেস্টে গত দুই বছরে দেশের সেরা পারফর্মার তিনি। দলে জায়গা থিতু থাকা এবং লম্বা ক্যারিয়ার বিবেচনায় লিটন অধিনায়কত্বের আলোচনায় আছেন। এর আগে মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এর বাইরে ঘরোয়া পর্যায়েও তার নেতৃত্ব দেওয়ার নজির নেই।

নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা সীমিত থাকলেও সাকিবের মতো ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের জন্য দলে সুনাম আছে লিটনের। মুমিনুলের অধিনায়ক থাকার সময়ও ফিল্ডিং সাজানোর কাজটা করে আসছিলেন তিনিই। সতীর্থদের সঙ্গে তার সম্পর্কও ভীষণ ভালো। তবে লিটনের জন্য নেতিবাচক দিক হচ্ছে তিনি খেলার বাইরে একটু অন্তর্মুখী স্বভাবের। আরেকটি বিষয়ও ভাবাতে পারে বিসিবিকে। লিটন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসার নাম। দারুণ ছন্দে থাকা অবস্থায় তার উপর নেতৃত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে কিনা এটিও ভেবে দেখার বিষয়। তিনিও রান খরায় পড়ে গেলে চরম সংকটে পড়তে হবে দলকে।

মেহেদী হাসান মিরাজ: নেতৃত্বের আলোচনায় আরেক নাম অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। বাকি দুজনের মতো তারও একাদশে জায়গা একদম পাকা। চোট না থাকলে অফ স্পিনের পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে মিরাজের ব্যাটিং দলের জন্য অক্সিজেনের মতো।

মিরাজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক তার নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা এরমধ্যেই বেশ ঋদ্ধ। যুব বিশ্বকাপ পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের আসর বিপিএলেও তাকে একাধিকবার অধিনায়কত্ব করতে দেখা গেছে। সে হিসেবে টেস্ট অধিনায়কত্ব পেতে পারেন তিনি।

তবে তারও একটি নেতিবাচক দিক আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করার সময় সতীর্থদের সঙ্গে একটু দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার। মিরাজের ম্যান ম্যানেজমেন্ট নিয়েও নানা সময়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় দল সামলাতে তিনি কতটা পারদর্শী হতে পারেন তা দেখার বিষয়।