২২ গজের ক্রিকেট পিচে হয়তো দেখা নেই বহুবছর, কিন্তু দীর্ঘদিনের সতীর্থ মোশাররফ হোসেন রুবেলকে ভুলে যাননি তার সহযোদ্ধারা। ব্রেন টিউমারজনিত সমস্যায় হাসপাতালে শয্যাশয়ী রুবেলের পাশে দাঁড়ালেন বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টের পক্ষ থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয়া হয় রুবেলের মা ও স্ত্রীর হাতে। এসময় তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
রুবেলের স্ত্রী চৈতি ফারহানা রুপা দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি মাফরাফি বিন মর্তুজাকে ধন্যবাদ জানান। রবিবার বিকালে রুবেলের চিকিৎসার জন্য মতিঝিল সিটি সেন্টার কার্যালয়ে তার স্ত্রীর কাছে ১৫ লাখ টাকা হস্তান্তর করে মোনার্ক মার্ট।
চেক গ্রহণের পর রুবেলের স্ত্রী চৈতি ফারহানা রুপা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘গতবারের সার্জারির পর আমাদের যা সেভিংস ছিল সেটার ওপর ভালো একটা ধাক্কা গেছে। আমাদের এমন দুঃসময়ে সাকিব ভাই ও মোনার্ক মার্ট আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এর আগে মাশরাফি ভাইও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবসময় খোঁজ রাখেন। সেজন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের কাছে আমরা আসলে খুবই কৃতজ্ঞ।’
এসময় পাশে থাকা রুবেলের বৃদ্ধা মা ছেলের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান। কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুবেলের মা।
রুবেলের স্ত্রী জানান, রুবেল অবশ্য এখন খুব একটা কথা বলতে পারে না। তবে তার সতীর্থ সাকিব তার পাশে দাঁড়িয়েছে এতে সে খুব খুশি হয়েছে। দুঃসময়ে তারা পাশে আছেন এটাই আমাদের জন্য অনেক কিছু। আমরা আসলে অনিশ্চিত একটা সময় পার করছি। এমন সময়ে বড় মানুষগুলো, বন্ধুরা, মাঠের সতীর্থরা যখন পাশে থাকেন তখন সাহস অনেক বেড়ে যায়।
হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে রুবেল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সবগুলো ম্যাচ দেখেছেন এমনটা জানিয়েছেন তার স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কেবিনে নেওয়ার পর সে বাংলাদেশের সবগুলো ম্যাচ দেখেছে। বাংলাদেশ জেতার পর তার যে খুশি সেটা দেখার মতো ছিল। বিছানায় শুয়ে শুয়েও সে বাংলাদেশকে সাপোর্ট করছে।’
২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে রুবেলের। দেড় বছর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর ইউনাইটেড হাসপাতালেই সর্বশেষ কেমোথেরাপি নিয়েছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নিউরো সার্জন এলভিন হংয়ের তত্ত্বাবধানে সফল অস্ত্রোপচার হয় তার। এরপর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য তাকে নিয়মিত সিঙ্গাপুর যাওয়া আসার মধ্যে থাকতে হতো। ওই বছরের ডিসেম্বর সর্বশেষ কেমো দেওয়া হয়। এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি।
২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হলে ভেঙে পড়েন। জানুয়ারি থেকে পুনরায় কেমো নেওয়া শুরু করেন। বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মোশাররফ হোসেন রুবেল।