রুশ সামরিক ‘জেড’ প্রতীকের রহস্য

ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সামরিক যানে ব্যবহৃত নতুন প্রতীক নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিশ্লেষণ। কেন এই ব্যতিক্রমী প্রতীক ব্যবহার করছে রাশিয়া সে প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর মেলেনি এখনো। তবে ধারণা করা হচ্ছে যাঁরা এই যুদ্ধে সমর্থন দিচ্ছেন বা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এ হামলাকে সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁরা ‘জেড’-কে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এই ‘জেড’ কীভাবে রাশিয়ার ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রতীক হয়ে উঠল, তা তুলে ধরা হয়েছে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘জেড’ দিয়ে ‘জা পোবেদি’ বোঝানো হতে পারে, রুশ ভাষায় যার অর্থ ‘জয়ের জন্য’। অথবা ‘জাপাদ’ বোঝানো হতে পারে, যার মানে ‘পশ্চিম’।

অনেকে এই প্রতীক আঁকা যানবাহনগুলোকে ‘জিরো স্কোয়াড’ বলতে চাইছেন। আবার অনেকে বলতে চাইঠেন ‘জেড’ দিয়ে ক্রেমলিনের তার এক নম্বর টার্গেটকে বোঝাতে চাইছে, আর তিনি হলেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ওপেন সোর্স নিয়ে গবেষণা করা বেলিংক্যাটের গবেষক অ্যারিক টোলের রাশিয়ার সামরিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন সেই আট বছর আগে থেকে, যখন রুশ বাহিনী পূর্ব ইউক্রেইনে ক্রিমিয়া দখল করে নিল।

তিনি বলেছেন, ২০ ফেব্রুয়ারিও তাদের কোনো ধারণা ছিল না যে ‘জেড’ দিয়ে কি বোঝানো হচ্ছে। আগে কখনও এরকম কিছু তারা দেখেননি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, “সুতরাং, সবচেয়ে খারাপটিই ধরে নিচ্ছি, আমার ধারণা/ভয়।”

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা নীতি বিশ্লেষক রব লি ইউক্রেইনের সীমান্তে রাশিয়ার সেনা সমাবেশ শুরুর পর থেকে ‘জেড’ প্রতীক সম্বলিত যানবাহনগুলো পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন। তার ধারণা, এটা দিয়ে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া সামরিক বাহিনীর কনটিনজেন্টকে বোঝানো হচ্ছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের পিএইচডির ছাত্র লি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি টুইটারে লেখেন, “দেখা যাচ্ছে ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে জড়ো হওয়া যানবাহনগুলোকে এই অভিযানে সমন্বিত বাহিনী হিসেবে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য সেগুলোর গায়ে ‘জেড’ প্রতীক আঁকা হয়েছে।”

অবশ্য ইউক্রেইনে অভিযান শুরুর পর রহস্যময় প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত এই ‘জেড’ রাশিয়ায় যুদ্ধ সমর্থকদের কাছে সমর্থন জানানোর একটি জনপ্রিয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক একে ব্যাখ্যা করছেন একটি নতুন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উন্মেষের ইঙ্গিত হিসেবে।

রুশ নাগরিকে এখন তাদের গাড়িতে ‘জেড’ প্রতীক আঁকছেন, জামার হাতায়, পকেটে এই প্রতীক সম্বলিত ব্যাজ ব্যবহার করছেন – যা থেকে মূলত প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি এবং রাশিয়ার প্রভাব বলয় বাড়াতে ইউক্রেইনের অংশবিশেষ দখল করে নেওয়ার পদক্ষেপকে সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা উইলসন সেন্টারের সাবেক ফেলো ও গবেষক কামিল গালিভ টুইটারে লিখেছেন, “ইউক্রেইনে আক্রমণের বিষয়ে জনসমর্থন আদায়ে রুশ কর্তৃপক্ষ একটি প্রচার চালু করে এবং তারা ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “মাত্র কয়েকদিন আগেই এই প্রতীক উদ্ভাবন করা হয় যা এখন রাশিয়ার নতুন আদর্শ ও জাতীয় প্রতীকে পরিণত হতে চলেছে।”

ইউক্রেইনের যুদ্ধে রুশ পক্ষের হতাহতের খবর প্রচারে কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি ক্রেমলিন একটি কঠিন আইনও চালু করছে, যেখানে ‘ভুয়া’ খবর ছড়ানোর শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আর এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে পুতিনের সমর্থকরা যুদ্ধের পক্ষে বড় জনসমর্থন তৈরি করতে পারছেন।

রাশিয়ার দক্ষিণপশ্চিমে তাতারস্তান অঞ্চলের কাজান শহরে ক্যান্সার আক্রান্তদের একটি আশ্রমের শিশুদের শীতের বরফে বের করে খোলা আকাশের নিচে লাইনে দাড়িয়ে ‘জেড’ প্রতীক তৈরি করতে বলা হয় শুধু রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতি সমর্থন দেওয়ার জন্য।