সৌদি-আমিরাতে অস্ত্র বিক্রির স্থগিতাদেশ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র

ইয়েমেনে চলমান সংঘাত বন্ধে ১ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরব ও আমিরাতের কাছে কাছে অস্ত্র বিক্রি বিষয়ক যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাহার করেছে মার্কিন সরকার। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অপর দেশ জর্ডানের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ক নতুন একটি প্রস্তুাবের অনুমোদনও দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগন।

সম্প্রতি হোয়াইট হাউস থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেওয়া মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করে- উল্লেখ করে পেন্টাগন থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আঞ্চলিক মিত্র ও অংশীদারদের প্রতিরক্ষা জোরদার করতে অস্ত্র বিক্রির যে প্রস্তাবনার অনুমোনদন দেওয়া হয়েছে- তা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়েই তার মিত্র ও অংশীদারদের নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।’

২০২০ সালের নভেম্বরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি বাবদ সৌদি আরবের সঙ্গে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার এবং আমিরাতের কাছে হক ক্ষেপণাস্ত্র, অত্যাধুনিক রাডার প্যাট্রিয়ট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাড বিক্রির জন্য ৬৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল মার্কিন সরকার।

কিন্তু গত বছর ২০ জানুয়ারী দেশের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার পরের মাসে, ফেব্রুয়ারিতে এই চুক্তি স্থগিত করেন ট্রাম্পের উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত প্রায় ৭ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে যুদ্ধ চলার ফলে যে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবেই এই স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন বাইডেন।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা শুরু থেকেই এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।

২০১৪ সালে ইয়েমেনের তৎকালীণ প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মনসুর হাদির সরকারকে হটিয়ে রাজধানী সানা দখল করে নেয় ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা।

হাদির সরকারকে ফের ক্ষমতাসীন করতে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সৌদি-আমিরাত সামরিক জোট।

কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ বছরে অন্তত ১০ হাজার শিশুসহ ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইয়েমেনে, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়া দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বর্তমানে খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।

নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরোতের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অপর দেশ জর্ডানের কাছে ৭০ টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানসহ গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের উপদানও বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র।