মালয়েশিয়ায় যা হচ্ছে তা ঠেকাতে হবে

অভিবাসন বিষয়ক সংসদীয় ককাসের চেয়ারম্যান ইসরাফিল আলম এমপি বলেছেন, মালয়েশিয়ায় যা হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রী তথা বাংলাদেশ সরকারের অভিবাসন নীতির বিরোধী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সংক্রান্ত নীতি যা জাতিসংঘে তিনি তুলে ধরেছেন গ্লোবাল কমপেক্ট ফর মাইগ্রেশনের আলোচনায় আমি তা জানি। একজন কেবিনেট মেম্বার-এর বাইরে যেতে পারেন না। সারা দুনিয়ায় আমরা যে নীতিতে লোক পাঠাই মালয়েশিয়ায় ব্যতিক্রম হবে কেন? তিনি বলেন, আমি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ই-মেইল করেছি। মালয়েশিয়ায় যা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমি কথা বলেই যাবো। এটা আমাদের ঠেকাতে হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, আমি বিশ্বের ৬-৭টি দেশে গ্লোবাল মাইগ্রেশন নিয়ে আলোচনা করতে সফর করেছি। বিদেশে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের অভিবাসন নীতি নিয়েই আমরা কথা বলি।

সেখানে একটি দেশের জন্য ওই নীতির ব্যত্যয় ঘটালে বিদেশে আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। উল্লেখ্য মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের কারণে বন্ধ থাকা শ্রম বাজার খোলা নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সফরের দিন থেকেই বিরুদ্ধাচারণ করে ফেসবুকে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন ইসরাফিল আলম এমপি। ৬ই নভেম্বর পুত্রাজায়ার মালয়েশিয়ার সংসদ ভবনে মন্ত্রী যখন বন্ধ শ্রমবাজার খোলার আলোচনায় ব্যস্ত তখন কুয়ালালামপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেন তিনি। ঢাকায় ফিরে টেলিভিশন টক শোতে মন্ত্রীর অবস্থানের বিরোধিতা করে কড়া বক্তব্য দেন। অভিযোগ করেন, মালয়েশিয়ার নতুন গভর্নমেন্টের কাছে ঢাকার তরফে ফের সিন্ডিকেট করার প্রস্তাব দেয়ার কারণে দেশটি বিরক্ত। আর এ জন্যই তারা বাংলাদেশ থেকে লোক নিতে চাইছে না। তবে কে বা কারা এ প্রস্তাব দিয়েছে তা তিনি খোলাসা করেননি। সংসদের প্রভাবশালী ওই এমপি এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিস্তর তদন্তের দাবি জানান। গতকাল আলাপেও ইসরাফিল আলম এমপি তার অবস্থানে অনঢ় থাকার ঘোষণা দেন। বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে যে ই-মেইল করেছি প্রয়োজনে গণমাধ্যমে প্রকাশ করবো। এটা ওপেন, এখানে কোন লোকচুরি নেই। আমার কোন স্বার্থ নেই। জনস্বার্থেই আমি এসব বলছি, বলে যাবো।

টক শোতে যা বলেছেন: একটি বেসরকারি টেলিভিশন টক শোতে ইসরাফিল আলম বলেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, আমি প্রবাসী কণ্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। শ্রমবাজার নিয়ে এদেশের মানুষ যেটা চায় আমি ওখানে গিয়ে ভিন্ন কিছু দেখতে পেয়েছি। আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, মালয়েশিয়ায় কোনো সিন্ডিকেট করার প্রয়োজন নেই। সারা বিশ্বে শ্রমিকরা যেভাবে যায়, মালয়েশিয়াতেও সেভাবেই যাবে। মালয়েশিয়ান গভর্নমেন্ট সিন্ডিকেট চায় না বলেই প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া স্থগিত করেন। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী, কিছু রাজনীতিক ও কিছু আমলা মালয়েশিয়ার কিছু ব্যবসায়ী এবং আমলার সঙ্গে মিলে আবার ১০ এর জায়গায় ৩৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটা সিন্ডিকেট তৈরির চেষ্টা করছে। তার আলামত, তথ্য প্রমাণ অনেক কিছুই আমার কাছে আছে। আমি ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তিন দিনের সফর একদিনে শেষ করে চলে এসেছি। সিন্ডিকেট মালয়েশিয়াতে হবে- এটা প্রধানমন্ত্রী চান না জানিয়ে তিনি বলেন, যে যেভাবে চেষ্টা করুক না কেন, তা হবে না।

সিন্ডিকেট আমাদের মাইগ্রেশন খরচ বাড়িয়ে দেয় তিনগুন, যে সিন্ডিকেট আমাদের শ্রমিকদের নিয়ে ওখানে সঠিক কাজ দেয় না, মজুরি দেয় না, বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়ায় না, গ্রেপ্তার হলে জামিন করায় না, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করে না, শ্রমিকদের ওয়েলফেয়ার, সেফটি সিকিউরিটির কোনো দায়িত্ব পালন করে না, এমনকি মারা গেলে দেশে লাশ পাঠাতে চায় না- নিষ্ঠুর অমানবিক সিন্ডিকেট কেন আমাদের রাখতে হবে? তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার পত্রিকাগুলোতে খবর বেরিয়েছে- সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এন্টিকরাপশন ফের নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা যে, কোনো রকমের সিন্ডিকেট নয়, সারা বিশ্বে যেভাবে মানুষ যায় মালয়েশিয়াতে সেভাবেই যাবে। তাহলে এক লাখ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকার বেশি কোনোভাবেই খরচ হবে না বলে আমার বিশ্বাস।

আমি দায়িত্ব নিয়েই এটি বলছি। তিনি বলেন, সব কথা বলতে পারছি না। আমি মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে সম্পূর্ণ প্রস্তাবণা প্রধানমন্ত্রীকে মেইল করেছি। এ সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও অবহিত করেছি। বিষয়টি খুবই সিম্পল। যারা ক্রিমিনাল হিসেবে পরিচিত, বিভিন্ন কারণে যাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হয়েছে, তারা যাতে এখানে লোক পাঠানোর সুযোগ না পায়। সরকার যেনো এ ব্যাপরে কঠোর হয় সেটাই আমি চাই। আমার কথা হলো- যখন কিছু ব্যবসায়ীকে দিয়ে ‘লিমিটেড’ করে ফেলা হয়, তখন তারা ৭-৮টা লেয়ার তৈরি করে ফেলে। ওই ৭-৮টা লেয়ারের কারণে মাইগ্রেশন খরচ বেড়ে যায়। এক লাখ ৩০-৪০ হাজার টাকার বেশি যেটা খরচ হয় সেটা দুর্নীতি-ঘুষ। তিনি বলেন, নেপাল যদি জিরো মাইগ্রেশন কস্টে লোক পাঠাতে পারে তাহলে আমরা কেনো পারবো না?