বাবার আসনে মেয়েকে চায় কিশোরগঞ্জবাসী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা গত ৩ জানুয়ারি শপথ নিলেও অসুস্থতার কারণে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নিতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে তিনি শপথের জন্য সময় চেয়ে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু শপথ আর তার নেওয়া হয়নি। ওইদিন রাতেই তার মৃত্যু হওয়ায় শূন্য এই আসনে এখন উপনির্বাচন হবে।

সৈয়দ আশরাফের একমাত্র সন্তান লন্ডন প্রবাসী সৈয়দা রীমা ইসলাম থাইল্যান্ডের হাসপাতাল থেকে বাবার মরদেহ নিয়ে দেশে এসেছেন। রীমাকে বাবার রেখে যাওয়া আসনে জনপ্রতিনিধি দেখতে চায় কিশোরগঞ্জবাসী। শুধু এলাকাবাসীই নয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রত্যাশা। রীমা লন্ডনে এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করতেন।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার শোলাকিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা ফাইজুল হক গোলাপ বলেন, রীমা ইসলাম সব দিক থেকেই যোগ্য। আমরা বাবার আসনে মেয়ে রীমাকে চাই। তাকে যদি প্রার্থী করা হয় তাহলে এলাকাবাসী খুশি হবে এবং সবাই গ্রহণ করবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের উচ্চশিক্ষিত কন্যা সবদিক থেকেই যোগ্য। তাকে প্রার্থী করা হলে কারও কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

বাবার সঙ্গে রীমার ছবি এবং বাবার কফিনের দিকে তাকিয়ে রীমার কান্নাভরা চেহারার ছবি কয়েক দিন ধরে ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। ফেইসবুকেও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ গত ক’দিন ধরেই রীমাকে প্রার্থী করার দাবি জানাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শরীফ সাদী বলেন, রীমা ইসলাম লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত। তার যোগ্যতা নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই। এখন সবই নির্ভর করছে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ওপর।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘রীমা উচ্চশিক্ষিত মেয়ে এবং রাজনৈতিক পরিবারের। সে রাজনীতিতে আসতেই পারে। সে রাজনীতিতে এলে আমরা স্বাগত জানাব। আওয়ামী লীগ সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই হবে।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা ও কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের এই আসনের জন্য তার দুই ভাই ও বোন লবিং করছেন। সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হয়ে বিদেশে চিকিৎসাকালে তার ভাই সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি এলাকায় কয়েকটি সভাও করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফই নির্বাচন করবেন। তার প্রচার দল থেকেই করা হবে। ওই সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেজো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিনও মনোনয়ন ফরম কেনেন।

স্থানীয় নেতারা মনে করেন, সৈয়দ আশরাফের ভাই-বোনের চেয়ে তার মেয়েকে মনোনয়ন দিলে সবচেয়ে ভালো হবে। এলাকাবাসী রীমা ইসলামের মধ্যে সৈয়দ আশরাফের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। তিনিই আশরাফের সততার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, পুরো বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। সৈয়দ আশরাফের মতো একজন নেতা হারানোর অভাব অপূরণীয়।

এদিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আসন নিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তার সংসদ সদস্য পদটি শূন্য ঘোষণা করা নিয়ে।

কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফ। মৃত্যুর সময়ও তিনি জনপ্রশাসনমন্ত্রী ছিলেন। তার সদস্য পদটি চলতি মাসের ২৮ তারিখে ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করবে। জাতীয় সংসদ সদস্যের পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েও তিনি জয়ী হন। আর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি তার জয়ী হওয়ার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মৃত্যুর সময় তিনি দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন আর একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত ছিলেন। যেহেতু তিনি শপথগ্রহণ করেননি, তাই একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হননি। এ অবস্থায় তার কোন আসনটি শূন্য হবে, তা নিয়েই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আগে কখনো এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, একটা জটিলতা আছে। কিন্তু আইনের স্পিরিট বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করতে পারে। এক্ষেত্রে তার আসনটি সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের মৃত্যুর দিনেই শূন্য হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। আর নির্বাচন হবে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে।