পোলিং এজেন্ট নিয়ে কৌশলী ধানের শীষের প্রার্থীরা

আর মাত্র ১ দিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। কিন্তু সিলেটের ১৯টি আসনে এখনও ‘পোলিং এজেন্ট’দের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেননি ধানের শীষের প্রার্থীরা।

তারা বলছেন, এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা যেমন সুবিধা ভোগ করছেন, বিরোধী জোটের প্রার্থীরা ঠিত ততটাই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মামলা, হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে তাদের অধিকাংশ সক্রিয় নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। পুলিশি হয়রানির ভয়ে অনেকেই এজেন্ট হতে চচ্ছেন না। ফলে অনেক স্থানে এখনও পোলিং এজেন্ট ঠিক করতে পারেননি তারা।

অনেক প্রার্থীর আশঙ্কা, রিটার্নিং অফিসারের কাছে পোলিং এজেন্টদের তালিকা দেয়ার পরপরই তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে। নির্বাচনের দিন পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বা থাকতে দেয়া হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা কৌশলে পোলিং এজেন্টের তালিকা করছেন। প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য বিকল্প একাধিক পোলিং এজেন্ট রাখা হচ্ছে। যেন প্রথমজনকে গ্রেফতার করলে দ্বিতীয় বা তৃতীয়জন দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ বাহিনী আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়েও ভয়ঙ্কর আচরণ করছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে সিলেট বিভাগের প্রায় ১১ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আসামি করে প্রায় ৭০টি মিথ্যা মামলা করেছে। এসব মামলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের মা-বাবাকে হুমকি দিচ্ছে। ৩০ তারিখ পর্যন্ত এলাকায় না থাকতে বলছে। তবুও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিজয়ের অপেক্ষায় শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। ডা. জীবন বলেন, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পোলিং এজেন্টের অভাব নেই। তবে নিয়োগকৃত পোলিং এজেন্টরা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের না পেলে মা-বাবা ও পরিবারের লোকজনকে গালাগাল করছে।

সিলেট-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, পোলিং এজেন্ট দেয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের তালিকা দেয়া পর গ্রেফতারের আশঙ্কা করছি। একই শঙ্কা সিলেট-৩, সিলেট-৪ ও সিলেট-৬ আসনের ধানের শীষের প্রার্থীরা। সিলেট-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, পোলিং এজেন্ট হতে ভীষণ ভয় পাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এখন পর্যন্ত ২৫ ভাগ এজেন্ট নিয়োগ বাকি।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন জমিয়ত নেতা শাহীনূর পাশা চৌধুরী বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা পুলিশের হয়রানিতে ভীতসন্ত্রস্ত। পুলিশ আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে। তিনি বলেন, পুলিশের হয়রানির কারণে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে বেকায়দায় আছি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ বেশ কিছু সেন্টারে আমাদের পোলিং এজেন্টদের শেষ পর্যন্ত থাকতে দেয়া হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা আছে।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়ার অভিযোগ, পুলিশি হয়রানির কারণে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে সংকটে রয়েছি। কখন কাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়, সে জন্য ফাইনাল তালিকা তৈরি করতে পারছি না। মৌলভীবাজারের ৪টি আসনের ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫১২টি কেন্দ্রের মধ্য এখনও অনেক কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট নির্ধারণ করতে পারেননি তারা।

হবিগঞ্জের ৪টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা পোলিং এজেন্ট প্রায় চূড়ান্ত করে ফেললেও তারা সে তালিকা প্রকাশ করছেন না। এজেন্টরা গ্রেফতার, মামলা, হামলার শিকার হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই তারা এ গোপনীয়তা বজায় রাখছেন বলে জানান প্রার্থী ও তাদের প্রধান এজেন্টরা। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া বলেন, আমরা এজেন্টদের তালিকা তৈরি করছি। তবে গ্রেফতারের আশঙ্কায় তাদের নাম প্রকাশ করছি না। হবিগঞ্জ-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আহমদ আবদুল কাদেরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আবদুল করিম জানান, এজেন্ট পাচ্ছি। তবে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

সম্ভাব্য এজেন্টদের বাড়িঘরে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। প্রতিদিনই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। হামলা হচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে। তাই সম্ভাব্য এজেন্টদের নাম এখনই প্রকাশ করছি না।–যুগান্তর