যে কারনে খালেদার আসনে হতাশ বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে এলাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জিততেন সেই বগুড়া-৭ আসনে এবার ধানের শীষে ভোট দেওয়ার সুযোগ হবে কি না, এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় দলের নেতাকর্মীরা। দলের প্রার্থী মোরশেদ মিল্টনের প্রার্থিতা উচ্চ আদালতে আটকে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এই আসনে মিল্টন শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে না পেলে বিএনপিকে ভোট থেকে দূরেই থাকতে হবে। কারণ, সেখানে জোটের কাউকে সমর্থন দেওয়ারও উপায় নেই। কারণ, মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির আলতাফ আলীর বাইরে যে দুজন প্রার্থী আছেন তারা স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন আবার আওয়ামী লীগ ঘরানার। অন্যজনের স্থানীয়ভাবে ভাবমূর্তি নেতিবাচক।

গত ১৮ ডিসেম্বর এই আসনে বিএনপির প্রার্থী মোরশেদ মিল্টনের প্রার্থিতা স্থগিত করে আদালত। বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে না পারার পর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানেই ভরসা করেছিল তার দল। গত ২ ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়ার চিঠি গ্রহণের আগেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় মিল্টনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খান। আর এতেই স্থগিত হয় মিল্টনের প্রার্থিতা।

আর উচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তে পুরোপুরি প্রচার থেমে যায় বিএনপির। অন্যদিকে লাঙ্গলের পক্ষে চলছে ভোট প্রার্থনা, যদিও তাদের সমর্থন এখানে বিএনপির তুলনায় অনেক কম, এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থন যোগ হলেও।

গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিজের এলাকা। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবার এই আসন থেকে জিতে আসছেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালে তিনি জেতেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৯১৯ ভোটে। ওই বছর আলতাফ আলী ৯২ হাজারের কিছু বেশি ভোট পান।

২০১৪ সালে ‘একতরফা’ নির্বাচনে জেপির (মঞ্জু) এ টি এম আমিনুল ইসলামকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন আলতাফ আলী। তখন তিনি ভোট পান ১৭ হাজার ৮৭৯টি।

বিএনপি না থাকলে জাতীয় পার্টির আলতাফ আলীর সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খান এবং রেজাউল করিম বাবলুর।

বিএনপির একজন নেতা বলেন, যদি আমাদের প্রার্থী না থাকে তাহলে বিকল্প কাউকে সমর্থন দেওয়ার নেই। কারণ, স্বতন্ত্র দুজনের একজনও আমাদের ঘরানার নয়।

ফেরদৌস আরা খান এবারই প্রথম ভোটের লড়াইয়ে। তিনি গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম খানের স্ত্রী।

আরেক প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সব নির্বাচনেই দাঁড়ান। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। স্থানীয়ভাবে তার ভাবমূর্তিও ভালো নয়।

জানতে চাইলে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মোরশেদ মিলটন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখানে আমাদের সমর্থন দেওয়ার মতো কেউ নাই। যদি ফিরে না পাই, তখন সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’

নিজের প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে বিএনপির নেতা বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছিলাম। এখন পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার অজুহাত তুলে প্রার্থিতা আটকে দেয়া হচ্ছে। সরকারের এ রকম হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল হারিয়ে যাচ্ছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’

শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল বাশার বলেন, ‘উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশের বিপরীতে আপিল করতে মোরশেদ মিল্টন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আতঙ্কের কিছু নেই। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সুরাহা হয়ে যাবে।’