গণমিছিল নিয়ে মাঠে নামছে ঐক্যফ্রন্ট

দুই থেকে তিন দিনের কর্মসূচি নিয়ে প্রচারের শেষ সপ্তাহে সারাদেশে ভোটারদের মাঝে ‘নির্বাচনী জোয়ার’ তুলতে চায় বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণসংযোগ শুরু হওয়ার পর হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারে অনেকটা ‘কোণঠাসা’ দলের প্রার্থীদের অনেকে কৌশলগত কারণে নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন।

এমন বাস্তবতায় ‘শেষ সময়ে’ মাঠ জমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর জোরেশোরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে দুদিনের গণমিছিল শেষে ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় বড় জনসভা করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বিএনপি নেতাদের ধারণা, সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর নির্বাচনী মাঠে অনেকটা ভারসাম্য ফিরে আসবে। তখন প্রার্থীরা প্রচার শুরু করতে পারবেন। নির্বাচনের অসমতল মাঠ কিছুটা হলেও ঠিক হবে। তাই যেসব আসনে বিএনপি প্রার্থীরা বেকায়দায় আছে, সেখানে প্রার্থীদের এখনই শক্তি ক্ষয় না করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকরা সেনা মোতায়েনের পর নির্বাচনী কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে চায়।

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু আমাদের সময়কে বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। কোনোভাবেই নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা যাবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করবেন আমাদের প্রার্থীরা।

গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা ঢাকায় জনসভা এবং সারাদেশে গণমিছিল করবে ঐক্যফ্রন্ট। কর্মসূচি চূড়ান্ত হলেও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

দলের নীতিনির্ধারকেরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেনা মোতায়েনের পর নির্বাচনী মাঠ কেমন হয়, তা দেখতে চাইছেন তারা। সে জন্য ২৪ ডিসেম্বরের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল মনে হলে নির্বাচনী মাঠে পুরোদমে নেমে পড়বে।

কুমিল্লার গণসংযোগে বুধবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ভোটের দিন দল বেঁধে কেন্দ্রে যেতে হবে। ভোট দেবেন এবং ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ছাড়বেন না। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন।

জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে গণমিছিল এবং ঢাকায় জনসভার প্রস্তাব উঠে আসে। এ বিষয়ে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। কর্মসূচিও প্রায় চূড়ান্ত। আজকালের মধ্যে নীতিনির্ধারকরা বৈঠক করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে।

গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরীর বিএনপি প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে ঢাকায় জনসভা সফল করতে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। যদিও বৈঠকে প্রার্থীদের সবাই উপস্থিত ছিলেন না। সেখানে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে কী সমস্যা হচ্ছে, তা জানতে চান মির্জা ফখরুল ইসলাম।

প্রার্থীদের সমস্যার কথা শুনে তাদের আরও কয়েক দিন ধৈর্য ধরে নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে আলোচনা হয়, আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ২৪ ডিসেম্বর মহানগর দক্ষিণে নির্বাচনী সমাবেশ করবেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপিকে প্রচারের কমতি ঘোচাতে শেষের দিকে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। যতই গ্রেপ্তার হোক, শেষের দিকে মাঠ দখলে রাখতে হবে।

দলের নির্ভরশীল সূত্র বলছে, প্রার্থীদের যারা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন এবং যারা নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে গণসংযোগে সেভাবে শুরু করতে পারেননি, সবাইকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মাঠে নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের শেষ দুই দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। কারণ শীর্ষ নেতাদের বিশ্বাস, ভোটের শেষের কয়েক দিন মাঠে থাকতে পারলে ভোটের মাঠে ভালোভাবে টিকে থাকবেন প্রার্থীরা।

এদিকে আদালতের আদেশে যেসব আসনে প্রার্থীশূন্য হয়েছে, সেখানে বিকল্প প্রার্থী দিতে নির্বাচন কমিশনে যাবে বিএনপি। গতকাল দলের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। দলের নেতারা ইসিকে বলেছেন, কমিশনের ক্ষমতা আছে বিকল্প প্রার্থী দেওয়ার। এ ব্যাপারে তাদের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। জানা গেছে, আজ বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রার্থী শূন্য আসনে বিকল্প প্রার্থীর তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যেতে পারে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানিয়েছেন, ২০ দলের ১৫ প্রার্থী কারাগারে আছেন। তারা হলেন রাজশাহী-৬ আসনের আবু সাঈদ চাঁদ, মাগুরা-১ মনোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, গোপালগঞ্জ-৩ এসএম জিলানী, কুমিল্লা-১০ মনিরুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫ শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ, সাতক্ষীরা-২ আবদুল খালেক, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-১ রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা।

গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব আসনে প্রার্থীরা এখনো মাঠে নামতে পারছেন না, মাঠে নামলেও হামলা-মামলার কারণে প্রচারে নেই এমন তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রচারের কৌশল জানাচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

আজ ড. কামাল ও ফখরুলের পৃথক সংবাদ সম্মেলন : ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আজ শুক্রবার পৃথক সংবাদ সম্মেলন করবেন। দলের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিকাল ৫টায় ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে ড. কামাল এবং মির্জা ফখরুল বেলা ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

এদিকে নির্বাচনী গণসংযোগে এবার নারায়ণগঞ্জে যাবেন মির্জা ফখরুলসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। দুপুর ২টায় গুলশান কার্যালয় থেকে রওনা হবেন তিনি। সেখানে কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য রাখবেন নেতারা।