জাপার ব্যাপক প্রচার ভীত বিএনপি

রাজধানীর দোলাইরপাড়, পোস্তগোলা, মিরহাজিরবাগ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপরে লাঙল ও হাতপাখা প্রতীকের পোস্টার চোখে পড়ে। কিন্তু কোথাও নেই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পোস্টার লাগাতে গেলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা তাদের মারধর করে এবং পোস্টার ছিনিয়ে নেয়। আর ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সহযোগিতা করে পুলিশ। যে কারণে পোস্টার লাগানো হয়নি ধানের শীষের।

এই চিত্রটি ঢাকা-৪ আসনের। শ্যামপুর ও কদমতলী থানা নিয়ে গঠিত এ আসনে প্রার্থী ৯ জন। তাঁরা হলেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ, মহাজোটের লাঙল প্রতীকের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জাকের পার্টির মো. আজাদ মাহমুদ (গোলাপ ফুল), ইসলামী ঐক্যজোটের মো. শাহ্ আলম (মিনার), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মো. হাবিবুর রহমান শওকত (মশাল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সুমন কুমার রায় (আম), গণফ্রন্টের সহিদুল ইসলাম মোল্লা (মাছ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ মো. মোসাদ্দেক বিল্লাহ (হাতপাখা), বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. কবির হোসেন (কুলা)।

মনোনয়ন পাওয়ার পর এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের (বাবলা) কর্মীরা প্রতিদিনই প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।

এলাকায় ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোট উৎসব বলতে যা বোঝায় সেটা এখনো অনুপস্থিত। তাদের মতে, এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু হোসেন বাবলা ও বিএনপির সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ। সালাহ উদ্দিন আহম্মেদও এই আসনে আগে সংসদ সদস্য ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে লাঙল প্রতীকের বিপরীত চিত্র বিএনপিতে। দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক রয়েছে।

এই দুজন প্রার্থী ছাড়াও এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. আওলাদ হোসেনও জনপ্রিয়। তবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তাঁর প্রচারণা দেখা যায়নি বলে এলাকাবাসী জানায়।

গতকাল সকাল থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অর্ধশতাধিক স্থানে লাঙল প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগে নামে। জুমার নামাজের পর মিরহাজিরবাগে গণসংযোগ করেন বাবলা। এ সময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী হাবিবুর রহমান হাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান ববিসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সকালে আলমবাগে মহিলা লীগ ও মহিলা পার্টির নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালান বাবলার স্ত্রী সালমা হোসেন। মিছিল করেন তাঁরা। বিকেল সাড়ে ৩টায় শ্যামপুর বালুর মাঠে সভায় বক্তব্য দেন বাবলা।

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি জয়ের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। মহাজোট ক্ষমতায় যাবে ইনশাআল্লাহ। এখানে আমি বিগত দিনে অনেক কাজ করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসন করেছি। ১৬টা পানির পাম্প করেছি। এবার যদি আল্লাহর রহমতে নির্বাচিত হতে পারি তা হলে দুটি কমিউনিটি সেন্টার করব। একটি খেলার মাঠ করব, একটি কবরস্থান করব, একটা সরকারি কলেজ করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাদক অনেক কমে এসেছে। এবার নির্বাচিত হলে মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে এ এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করব। এটা আমার প্রধান প্রায়োরিটি।’ তিনি আরো জানান, নির্বাচিত হলে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ কোনো অসৎ কাজ করতে দেবেন না তাঁর এলাকায়।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে মিরহাজিরবাগ এলাকায় ধানের শীষের প্রচারণায় নামেন সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছিল। তারা ভোটারদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে। কোনো কোনো ভোটার ধানের শীষের লিফলেট নিতে অনাগ্রহ দেখায়। বাগিচা এলাকার ভোটার সুমন জানান, তিনি ভয়ে ধানের শীষের লিফলেট নেননি। এই লিফলেটের কারণে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

জুমার নামাজ পড়ার জন্য মিরহাজিরবাগের বাগিচা মসজিদে ঢোকেন সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ। এ সময় মসজিদের সামনে বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মীকে দেখা যায়। তারা সেখানে অবস্থান করলেও সতর্ক দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে ভয় আছে।

প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছি না। পুলিশ আমাদের কর্মীদের আটক করে নিয়ে যায়। মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম সেখানে মুসল্লিদের মাঝেও অস্বস্তি দেখেছি। তারা ভেবেছে, আমি নামাজ পড়তে এসেছি এখন না পুলিশ সেখানে এসে গ্রেপ্তার শুরু করে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কর্মীরা পোস্টার লাগাতে পারছে না। যেখানেই পোস্টার লাগাতে যায় সেখানেই মারধরের শিকার হতে হয়। আজ (শুক্রবার) যখন কিছু কর্মী নিয়ে বের হলাম তখন রাস্তায় পুলিশ ভিডিও করে রেখেছে। একটা ভয়ংকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের সময়।’