জিটুজি ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মানবেতর জীবনযাপন

মালয়েশিয়ায় জিটুজি ভিসায় আসা বাংলাদেশের প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক একটি কোম্পানিতে অসহায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। দেশটির সরকারকে ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন বেতন থেকে নানা অজুহাতে অর্থ কেটে রাখছে সেলাঙ্গর প্রদেশের ক্লাং জেলার জালান কাপা এলাকায় অবস্থিত ‘তিওং তাত প্রিন্টিং ইন্ড্রাস্ট্রিজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সহায়-সম্বল বিক্রি এবং চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া এসেছেন বাংলাদেশ থেকে বহু শ্রমিক। কিন্তু সুখ-শান্তি তো দূরের কথা, এই শ্রমিকরা মানবেতর দিনযাপন করছেন। তাদের অভিযোগ, ১ হাজার রিঙ্গিত বেসিক ও ওভারটাইম ভাতা বেসিকের দেড়গুণ এবং সরকারি ছুটির দিনে কাজ করলে বেসিকের দুই গুণ দেয়ার কথা থাকলেও কোনো ওভারটাইম দিচ্ছে না। কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করলেও বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। ১ হাজার রিঙ্গিত বেসিক মজুরির মধ্যে নানা অজুহাতে অর্থ কেটে দেয়া হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ রিঙ্গিত। পাশাপাশি মালয়েশিয়ান সরকার প্রবাসীদের ভিসার ফি বা লেভি ফ্রি করলেও ওই কোম্পানি শ্রমিকদের বেতন থেকে তা কেটে রাখছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

শ্রমিকরা বলেন, এক রুমে আমাদের ২৬ জনকে রেখেছে। এরসঙ্গে একটিই টয়লেট। এখানে একজন যদি পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করেন তবে ২৬ জনের কত মিনিট যায়? এক মিনিট দেরি হলে কোম্পানি এক ঘণ্টার টাকা কেটে নেয়।

অথচ দেশটির সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে কোনো কোম্পানি যদি শ্রমিকদের বেতন থেকে লেভি আদায় করে কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ থাকলেও তারা এ আদেশের তোয়াক্কা করছে না।

লেভি কাটা নিয়ে অভিনব কায়দা অবলম্বন করছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। জানুয়ারি ২০১৮’র পূর্বে প্রত্যে

ক মাসের বেতন শিটে লেভি ১২০ রিঙ্গিত, হোস্টেল ভাড়া ফ্রি উল্লেখ থাকলেও জানুয়ারি থেকে বেতন শিটে লেভি ও হোস্টেল ফি উল্লেখ থাকছে না। এসব সম্পর্কে অফিস কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা না বলতে এবং দেশে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

এ বিষয়ে শ্রমিকরা মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করলে সেখানে গিয়ে নিয়োগকারী ও শ্রমিকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। তিনি শ্রমিকদের কেটে রাখা ন্যায্য মজুরি নিয়োগকারীকে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মোঃ সায়েদুল ইসলাম।

প্রতি মাসের ৫ তারিখে বেতন দেয়ার কথা থাকলেও মাসের ১৫-২০ তারিখের আগে বেতন দেয়া হয় না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। এছাড়াও কোনো শ্রমিক অসুস্থ হলে তাকে মেডিকেলে নিতে গড়িমসি করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।