বল হাতে নয়, মুখের কথায় ঘায়েল করেছেন পাওয়েলকে। ম্যাচের শেষ প্রান্তে মাশরাফি বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছেন রোভমান পাওয়েলের সঙ্গে। কী কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে পাওয়েলের?
ক্রিস গেইলকে তেড়েফুঁড়ে নামতে দেখে মাহমুদউল্লাহ একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন।
ওয়ার্নার পার্কের মাঠটা এমনি ছোট, করেন আবার দানবীয় ব্যাটিং। পুরো সিরিজে ঘুমিয়ে থাকা গেইল কি আজ জেগে উঠবে? সিরিজ জয় শেষে টিম হোটেলের সামনে রাতের আড্ডায় মাহমুদউল্লাহ হাসতে হাসতে বলছিলেন, মাশরাফিকে নিজের ভয়ের কথা মাঠেই বলেছিলেন, ‘নামার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল, মামা আজ গরম আছে, কী যে হবে!’
গেইল সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছিলেন। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। গেইলের আক্রমণ দেখে মাশরাফি একবার মজা করে জ্যামাইকান ওপেনারকে বললেন, ‘তুমি আজ মুর্তজার মতো খেলছ!’
কাল মাশরাফি ছয়ে নেমে ছোট্ট যে ঝড় তুলে গেছেন, বাংলাদেশকে সেটিই বড় স্কোর পেতে সহায়তা করেছে। বিপিএলে গত বছর রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন দুজন, সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকেই গেইলের সঙ্গে মাশরাফির রসিকতা। পুরো সিরিজে গেইলকে মাঝেমধ্যেই খুঁচিয়েছেন মাশরাফি। কালও বেশ কয়বার বাতচিত হলো। গেইলও কম যান না। মাশরাফির মতো ব্যাটিং করছেন—খোঁচাটা নিজের মতো করে হজম করেছেন গেইল। রসিকতার জবাবে খেঁক খেঁক হাসি দিয়ে উঠলেন, প্রেসবক্স থেকে সেটা শোনা যাচ্ছিল! হাসি থামিয়ে গেইল শান্ত স্বরে জবাব দিলেন, ‘এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই বন্ধু!’
আক্রমণ শুরু করেছিলেন, তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। রুবেল হোসেনের শিকার হয়ে গেইল ফিরেছেন ৬৬ বলে ৭৩ রান করে। তবে গেইলের চেয়ে বাংলাদেশকে বেশি চোখ রাঙিয়েছেন রোভমান পাওয়েল। শেষ দিকে যেভাবে পেটাচ্ছিলেন, বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমানকে, জয়টা একেবারে অসম্ভব ছিল না উইন্ডিজের জন্য। সে সময়ই পাওয়েলকে মানসিক চালে ঘায়েল করেন মাশরাফি।
প্রেসবক্স থেকে দেখা গেল, মাশরাফি এগিয়ে এসে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন পাওয়েলের সঙ্গে। যেন পাওয়েলকে বোঝাচ্ছেন! কী কথা তাহার সাথে! পরে জানা গেল রহস্যটা। এমনিতেই তখন সমীকরণ কঠিন হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। মাশরাফি আরও বেশি মানসিক চাপ তৈরি করতে চেয়েছেন। বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন কত বলে কত দরকার। পাওয়েলের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন সন্দেহের বীজ।
বলেছেন, খামোখা চেষ্টা করছ। পারবে না। পাওয়েল তবু হাল ছাড়তে নারাজ। ‘তোমার কি মনে হয়, এই ওভারে (৪৯তম ওভারে) ২৪ রান নিতে পারব না?’ বাংলাদেশ অধিনায়ক উল্টো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানকে প্রশ্ন করলেন, ‘আমার মনে করা পরে, তুমি কী মনে করো, পারবে?’
পাওয়েল জবাব দেন, ‘অবশ্যই পারব।’ মাশরাফির পাল্টা উত্তর, ‘তুমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছ!’
পাওয়েল শেষ পর্যন্ত পারেননি। বৃথাই গেছে তাঁর ৪১ বলে অপরাজিত ৭৪ রানের ইনিংসটি। শুধু তা-ই নয়, আগের সেই তেড়েফুঁড়ে ব্যাটিং করাটাও শেষ দিকে দেখা যায়নি। শেষের আগেই হাল যে ছেড়ে দিয়েছেন, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল শরীরী ভাষায়। তাতে বড় ভূমিকা আছে ৪৯তম ওভার করা রুবেলের। ভূমিকা আছে শেষ ওভারে প্রথম বলে ছক্কা হজম করেও ঘুরে দাঁড়ানো মোস্তাফিজের। কিন্তু বল হাতে না নিলেও অধিনায়ক মাশরাফির মনস্তাত্ত্বিক চালও দারুণ ভূমিকা রেখেছে। মাত্র তিন ম্যাচ খেলতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে এসেছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে তো তিনি আর নেই। এর মধ্যে এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। ক্যাপটেন ফ্যান্টাস্টিক মাশরাফি!
মাশরাফি জানালেন, ম্যাচের মধ্যে একটু কথার লড়াই হলেও পাওয়েল তাঁকে ভীষণ সম্মান করেন। আগের দিন নেটে বাংলাদেশ অধিনায়কের সঙ্গে দেখা হলে বলছিলেন, ‘তুমি আসলেই এক যোদ্ধা! উই অল রেসপেক্ট ইউ মান।’
মাশরাফিকে শ্রদ্ধা না করে উপায়ই বা কী!