ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে ‘সাবধান হয়ে যেতে’ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নইলে ‘নজিরবিহীন’ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এর আগে ট্রাম্পের উদ্দেশে রুহানি বলেন, ‘সিংহের লেজ নিয়ে খেলবেন না’। ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির মধ্যকার শান্তিচুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটন-তেহরানের চলমান উত্তেজনার ভেতর গত রবিবার দুই নেতার মধ্যে হুমকি-পাল্টা হুমকির এ ঘটনা ঘটল।
২০১৫ সালে ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিটি সই হয়। চুক্তির এক পক্ষে ছিল ইরান। আরেক পক্ষে ছিল ছয় পরাশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও জার্মানি। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করবে। আর এর বিনিময়ে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু গত ৮ মে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। যদিও বাকি পাঁচ পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চায়। তবে এ ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয়ে আছেন এ পাঁচ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানান, ইরান আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে সরে না এলে এবং সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ বন্ধ না করলে তাদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। রুহানি তাৎক্ষণিকভাবে এ হুমকি বাতিল করে দেন এবং গত রবিবার বলেন, ‘আপনি ইরানের জনগণকে তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করতে পারেন না।’
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ওই ভাষণে রুহানি আরো বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে শান্তিতে থাকলে তা হবে সব শান্তির জননী। আর যুদ্ধে লিপ্ত হলে তা হবে সব যুদ্ধের জননী।’ এ ছাড়া ‘সিংহের লেজ নিয়ে খেলা না করতে’ ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
রুহানির এ বক্তব্যের জবাবে রবিবার রাতে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প লেখেন, ‘ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি : আর কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো হুমকি দিয়েন না। নইলে এমন পরিণতি ভোগ করতে হবে, যা ইতিহাসে খুব কম দেশকেই ভোগ করতে হয়েছে।’ ট্রাম্প আরো লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আর আপনাদের উন্মত্ত সহিংসতা আর মৃত্যুর শব্দের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো দেশ নয়। সাবধান হয়ে যান!’
ট্রাম্পের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ক্যালিফোর্নিয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে এতটুকু ভয় পাই না।’ পম্পেও বলেন, যেসব দেশ ইরানের তেল কেনে, যুক্তরাষ্ট্র চায় তারা যেন নভেম্বরের মধ্যে তেল কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। নইলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
গত শনিবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি কিংবা চুক্তিতে তাদের স্বাক্ষর—কোনোটিই বিশ্বাস করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো চুক্তিই অকার্যকর।’
ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে লিপ্ত’ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন ইরানের ‘রেভল্যুশনারি গার্ডস’-এর কমান্ডার জেনারেল গোলাম হোসেন গেইপর। গতকাল তিনি বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মন্তব্য মনস্তাত্ত্বিকভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার শামিল।’
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখেন, এমন অনেক বিশ্লেষক ট্রাম্পের মন্তব্যে অবাক হয়েছেন। সিএনএনের সামরিক বিশ্লেষক রিক ফ্রানকোনা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের মুখ থেকে এর আগে অনেক মারমুখী কথাবার্তা শুনেছি। কিন্তু সর্বশেষ মন্তব্যটি খানিকটা আলাদা। তাঁর মন্তব্যকে গতানুগতিকের বাইরে এবং অনেক মানুষের জন্য হুমকি বলে মনে হচ্ছে।’
সূত্র : এএফপি, সিএনএন।