সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণচীনের উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলী রাজ্য জিনজিয়াং হতে ধারণকৃত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যার ক্যাপশনে চীনা পুরুষের সাথে জোর করে মুসলিম উইঘুর তরুণীকে চীনা কর্তৃপক্ষের বিবাহ প্রদানের কথা বলা হয়। ফেসবুক ভিত্তিক উইঘুর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপ টক টু ইস্ট তুর্কিস্তান-এ এই দাবি করা হয়।
গ্রুপটির মতে, ঝিংজিয়াংয়ে উইঘুরদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য বিনাশ এবং উইঘুর জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার অংশ হিসেবেই চীনা কর্তৃপক্ষ এ ধরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এই ভিডিওতে দেখা যায়, বিবাহ অনুষ্ঠানের একজন আয়োজক চীনা পাত্রকে জিজ্ঞেস করছেন কতদিন যাবৎ তিনি পাত্রীকে চেনেন, তখন তিনি জবাব দেন তিনি মাত্র দুই মাস যাবৎ পাত্রীর সাথে পরিচিত।
অন্যদিকে উইঘুর পাত্রীকে দেখা যায়, বিবাহ অনুষ্ঠানে আনন্দিত হওয়ার পরিবর্তে তিনি যেন বিষণ্ন ও দুঃখ ভারাক্রান্ত। তার বিবাহ অনুষ্ঠানে তাকে যেন কেউ অপমান করেছে।
ভিডিওটি সম্পর্কে এর আপলোডকারী জানান, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর বিরোধী বিভিন্ন চীনা অপতৎপরতার অংশ হিসেবে উইঘুর নারীদের জোর করে চীনা পুরুষের সাথে বিবাহ করানোর এটি একটি উদাহরণ মাত্র।
প্রসঙ্গত, গণচীনের উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলী রাজ্য জিনজিয়াংয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমেই তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে চীনা সরকারের কঠোর দমন-পীড়নের পরও তা কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না বরং ক্রমেই তার বিস্তৃতি ঘটছে। মূলত চীনের এ প্রদেশটি প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলে পূর্ণ হওয়ায় চীনা সরকার কিছুতেই তা হাতছাড়া করতে চায় না। কিন্তু এ অঞ্চলে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসা মুসলমানদের মৌলিক অধিকার পূরণ করতেও তারা রাজি নয় বরং চীনা কর্তৃপক্ষ প্রদেশটি থেকে মুসলমানদের উৎখাত করতে অতিমাত্রায় তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু স্বত্ত্বেও উইঘুর মুসলমানদের স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
তেল-গ্যাসে সমৃদ্ধ জিংজিয়াংয়ের নিরঙ্কুশ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত রাখতে হাজার বছর ধরে এ এলাকায় বসবাস করে আসা উইঘুর মুসলিমদের বিভিন্ন কৌশলে তাদের পৈতৃক ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে চীনা ‘হান’দের প্রতিষ্ঠিত করছে। যেখানে ১৯৪৯ সালেও জিংজিয়াংয়ের মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ ছিল ‘হান’ আর ৯৫ শতাংশই ছিল উইঘুর মুসলিম। সেখানে চীন কর্তৃক উইঘুর দখলের পর অন্যান্য স্থান থেকে ‘হান’দের এখানে এনে থাকতে দেওয়ায় এবং উইঘুর মুসলিমদের বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য করায় সেখানে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে ‘হান’দের সংখ্যা। ফলে হানদের সাথে উইঘুর মুসলমানদের একটা সংঘাতও প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আর এটাকেই চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুর মুসলমানদের ওপর দলন-পীড়ন চালানোর অজুহাত বানিয়েছে।
আর সে অজুহাতেই রাজ্যটিতে গত এক বছর ধরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও জোরদার নজরদারি চালানোর পরও সেখানে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন না হওয়ায় এই ব্যবস্থা দীর্ঘায়িত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।