সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজ্য বা আমিরাত আজমান এক সময় ছিলো অন্যান্য আমিরাতের তুলনায় পশ্চাতপদ একটি অঞ্চল। ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই রাজ্যের জনসংখ্যা মাত্র ৩৬ হাজার বালুকাপূর্ণ আজমান আমিরাত বা রাজ্যটির শাসক হচ্ছেন শেখ হুমায়েদ বিন রশিদ আল নুয়াইমি। এখানে গাছপালা বিরল। ছোট্ট এ রাজ্যের অবস্থান এটাকে সমৃদ্ধ করেছে। আজমান বাণিজ্য ও বন্দরনগরী দুবাই, তেল সমৃদ্ধ রাস আল খাইমাহ এবং প্রাচুর্যপূর্ণ শারজাহর নিকটে অবস্থিত। রাজ্যটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে তেল সমৃদ্ধ রাজ্য আবু ধাবী থেকে নিয়মিত ভর্তুকি লাভ করে থাকে। বলা হয় একটু দূরদর্শিতা থাকলে সামান্য কিছু অর্থ নিয়েও যে কেউ এই রাজ্যে কিছু একটা ব্যবসা করতে সক্ষম হবে। আজমানের শাসক শেখ হুমায়েদ তার এই ছোট্ট রাজ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যাপারে গোড়া থেকেই অত্যন্ত আগ্রহী ও সচেতন। তিনি শিক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
তিনি ‘আমিরাত নগরী’ (এমিরাইটস সিটি) নামক একটি নগরী তৈরীর পরিকল্পনা হাতে নিয়োছেন। এই নগর প্রকল্পে য়েছে শপিং মল ও আবাসিক ভিলাসহ ১০টি মধ্যমানের বহুতল ভবন। বর্তমানে একটি নতুন বিমান বন্দরের নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে এটা চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে আরো এ ছাড়া রয়েছে আরো বেশ কিছু প্রকল্প। তবে সম্পদ ও লোক বলের অভাবে এগুলোর কাজ তেমন দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে না। ইতোপূর্বে ভূ-সম্পত্তির মালিকানা লাভের অধিকার প্রদান করায় দুবাইয়ের ন্যায় আজমানেও বিদেশী বিনিয়োগের হিড়িক পড়ে। বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানী, ভারতীয় বিশেষ ভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক আজমানে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত এটা বন্ধ করে দিলে বিনিয়োগ হ্রাস পায়।
ড: সাঈদ সালমান ১৯৮১ সালে প্রথম কলেজ অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী প্রতিষ্ঠা করেন এই আজমানে।
বর্তমানে এখানে রয়েছে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ-যা বিভিন্ন আরব দেশসমূহ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করছে। আজমানে শাসক শেখ হুমায়েদের পৃষ্ঠপোষকতায় ড: সফিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলেজ সহ গালফ মেডিকেল কলেজকে ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। গালফ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির একটি নিজস্ব টিচিং হাসপাতাল রয়েছেÑযা অনেক আরব ও উন্নয়নশীল দেশেও নেই। এতে রয়েছে পোস্টগ্রাজুয়েট ও রেসিডেন্সী কোর্স ছাড়াও এমবিবিএস, ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি, ফার্মাসী-ডি এবং ডিএমডি আন্ডার গ্রাজুয়েট কোর্স বা প্রোগ্রাম। এটা এই অঞ্চলে সকল জাতির পুরুষ ও মহিলা উভয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রতিষ্ঠাতা থাম্বে মঈদীন। তিনি ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এর সভাপতি ছিলেন।
সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক সম্প্রসারণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হযেছৈ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি দিরহাম। এ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উন্নয়নের পাশাপাশি অনেকগুলো হেলথ সেন্টার, ল্যাবরেটারী, ২ হাজার শিক্ষার্থীর উপযোগী বাসস্থান, কনভেনশন সেন্টার, হেলথ ক্লাব ও স্পা, ৩শ’ বেডের একটি হাসপাতাল ও একটি মসজিদ নির্মাণ।
লক্ষণীয় যে, উপসাগরীয় দেশসমূহে (জিসিসি) ২০২০ সাল নাগাদ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছার সম্ভাবনা। প্রতি বছর এ অঞ্চলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আগামী ২০২০ সাল নাগাদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার পাশাপাশি আজমান আরেকটি কারণে বিখ্যাত।
রাজ্যটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম কিছু আরবী ঘোড়ার আবাসস্থল। আজমানের ক্রাউন প্রিন্স শেখ আম্মার বিন হুমায়েদ আল-নুয়াইমি ২০০২ সালে এখানে একটি ঘোড়ার খামার প্রতিষ্ঠা করেনÑযা ‘আজমান স্টাড’ নামে পরিচিত। আজমান নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মরুর বুকে আরবী স্টাইলে গড়ে তোলা হযেছে খামারটি। শৈশব থেকেই আরব। ঘোড়া এবং ঘোড়া প্রদর্শনীর প্রতি আগ্রহ প্রিন্স আম্মারকে এই খামার গড়তে উৎসাহ যুগিয়েছে।