পাকিস্তানে নির্বাচনের আগে বাজার থেকে উধাও ‘ডন’ পত্রিকা

‘নিউ ইয়র্ক শহরে সকালে ঘুম থেকে ওঠে যদি দেখা যায়, নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাটি নেই, সংবাদপত্র বিক্রির সব স্টল বন্ধ এবং হকাররা পত্রিকা বিলি করতে পারছেন না, তাহলে কেমন হতে পারে সেটা একবার কল্পনা করে দেখুন!’

লাহোরের সাংবাদিক আহমেদ রশিদ বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এমনটাই লিখেছিলেন। কারণ, পাকিস্তানের অবস্থা এখন অনেকটা সেরকমই। গত কয়েক মাস দেশটির সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ‘ডন’ পাঠকদের বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে । খবর বর্তমান পত্রিকার।

খবরে বলা হয়, আগামী ২৫ জুলাই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগে টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে সংবাদপত্র, এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উপরেও কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দেশের সেনাবাহিনী ও বিচারবিভাগ একজোট হয়ে সংবাদ মাধ্যম এবং কিছু কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

এসব অভিযোগ অবশ্য সেনাবাহিনী ও বিচারবিভাগ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। তবে, ইংরেজি দৈনিক ‘ডন’ এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে যে লড়াই চলছে সেটা সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই পত্রিকাটি পাকিস্তানের ব্যবসায়ী, কূটনীতিক এমনকি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যেও জনপ্রিয়। এর সম্পাদকীয় প্রভাবও উল্লেখ করার মতো। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সমাজে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি তৈরিতে এই পত্রিকাটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে যে ডন সংবাদ মাধ্যমটিকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, এর কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। হকাররা যাতে এই পত্রিকাটি বিলি করতে না পারে সেজন্য প্রত্যেক শহরের সেনানিবাসগুলোতে পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডন টিভি যাতে বাড়িতে বাড়িতে দেখা না যায় সেজন্যে কেবল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও এই পত্রিকায় ও টেলিভিশনে যেসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেয় তাদেরকে বলা হয়েছে সেখানে পণ্যের প্রচারণা না চালাতে। এর ফলে ডনের আয়-উপার্জনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ডন ছাড়াও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের লোকজনকে অপহরণ করারও অভিযোগ উঠেছে।

সাংবাদিক আহমেদ রশিদ বলছেন, সংবাদ জগতের মোটামুটি সবাই জানে যে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরাই এসবের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে এতদিন নীরব থেকেছে ডন। কিন্তু পত্রিকাটি খুব সম্প্রতি একটি খোলামেলা ও শক্তিশালী সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।

ডন পত্রিকাটি বলছে, ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তবে এই আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে গত মে মাস থেকে।

সাংবাদিক আহমেদ রশিদ লিখছেন, গত বছর এই একই ধরনের ভয়ভীতি ও আর্থিক চাপের মুখে পড়েছিল জনপ্রিয় উর্দু পত্রিকা ‘জং’ এবং তাদেরই সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল ‘জিও’। তাদের অবস্থা এমন হয়েছিল যে তিন মাস তারা তাদের সাংবাদিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেনি। কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে ‘ডন’-এর মতো অনড় থাকেনি। তাদের ঊর্ধ্বতন সম্পাদকরা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে এক ধরনের আপস সমঝোতা করে ফেলতে সক্ষম হন।