বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার আবারো পুরোদমে খুলছে। প্রাথমিকভাবে ১৯ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশি কর্মী নেবে দেশটি। এ লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। গতকাল বুধবার সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ে দেশটির মিনিস্ট্রি অব হিউম্যান রিসোর্সেস এন্ড এমিরেটাইজেশন-এর আন্ডার সেক্রেটারি সাইফ আহমেদ আল সুআইদি ও বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার নিজ নিজ দেশের পক্ষে এমওইউ’তে সই করেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০১২ সালে ২ লাখ ১৫ হাজার কর্মী দেশটিতে যায়। এর পর থেকে নানা কারণে দেশটিতে কর্মী প্রেরণ কমতে থাকে। ২০১৩ সালে ১৪ হাজার, ২০১৪ সালে ২৪ হাজার, ২০১৫ সালে ২৫ হাজার, ২০১৬ সালে ৮ হাজার, ২০১৭ সালে ৪ হাজার এবং চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০৫ জন কর্মী গেছেন আরব আমিরাতে। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখের অধিক বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এ বিষয়ে ইত্তেফাককে বলেন, আরব আমিরাত আমাদের ট্রাডিশনাল শ্রম বাজার। কয়েক ধরে এই দেশে কর্মী প্রেরণ সীমিত ছিল। নতুন সমঝোতা স্মারক সইয়ের ফলে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রেমিট্যান্স বাড়বে। ফলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল উত্তরণের পথ সুগম হবে। এখন অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী পাঠানো আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিগত কয়েক মাসের আলাপ আলোচনার পর এই এমওইউ চূড়ান্ত করা হয়। উভয় দেশের আগ্রহ ও সম্মতির ভিত্তিতে এটি সই হয়েছে। এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনিস্ট্রি অব হিউম্যান রিসোর্সেস এন্ড এমিরেটাইজেশন-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নাসের আল হামলি উপস্থিত ছিলেন।
এমওইউ’তে বাংলাদেশ থেকে ১৯টি ক্যাটাগরির কর্মী নিয়োগের বিধান, পদ্ধতি, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি ও উভয় দেশের সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য, কর্মীদের অধিকার, সুযোগ সবিধা, এমপ্লয়ারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, নিয়োগ চুক্তির বিধান ও পৃথক একটি বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ সকল কমীদেরর স্বার্থ রক্ষার্থে ২০১৭ সালে কার্যকর হওয়া আইনের আলোকে সমঝোতা স্মারকটিতে শ্রমিক, মালিক ও উভয় দেশের সরকারের দায়িত্ব বর্ণিত হয়েছে। নিরাপদ, সুশৃংখল ও দায়িত্বশীল শ্রম অভিবাসনের লক্ষ্য অর্জনের বিষয়সমূহ বিবেচনায় রেখে সমঝোতা স্মারকটি সই করা হয়। সমঝোতা স্মারকটি বাস্তবায়নের জন্য উভয় দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি জয়েন্ট কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।
এমওইউ সইয়ের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. সুজায়েত উল্ল্যা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক তারেক আহমেদ এবং দুবাইয়ে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল এস. বদিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
ইত্তেফাক/