এই চার কিংবদন্তির শেষ বিশ্বকাপ…

আইসিসি’র পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এই ক্রিকেট গ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসর। এর চেয়ে বড়মঞ্চ আর নেই এই ক্রিকেট গ্রহে। ফলে, চার বছরে একবার নিজেকে জাহির করার জন্য সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারই মুখিয়ে থাকেন। ছোটোবেলায় ব্যাট বা বল ধরার সময় থেকেই সব ক্রিকেটারই মনে মনে একটা স্বপ্নকে লালিত-পালিত করতে থাকে, যে একদিন দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলব। সবার এই আশা পূর্ণ হয় না। তাই যারা বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাদেরকে ভাগ্যবান বলতে হবে। আবার এমনও অনেক ক্রিকেটার আছেন, যারা দেশের হয়ে একাধিক বিশ্বকাপ খেলেছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তারা তারকা সমান।

আবার তাদের মধ্যে অনেকে ক্রিকেটীয় দক্ষতায় কিংবদন্তি। বয়সের ভারে তাদের অবসরের দিন চলে আসা মানে ক্রিকেট কিংবদন্তি হারা হয়ে পড়া। তবুও মেনে নিতে হয়। এটাই তো কালের নিয়ম। একটা প্রজন্ম বুটজোড়া তুলে রাখলে পরবর্তী প্রজন্ম জায়গা করে নেবে। এভাবেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাস বিবর্তিত হতে থাকে। ২০১৫’তে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপের আসর বসেছিল। সেবারের অনেক তারকাই বর্তমানে ক্রিকেটে নেই। ২০১৯ সালের ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বিশ্বকাপে অনেক নতুন ও পুরতন তারকাকে দেখতে পাবে ক্রিকেট দুনিয়া। তবে, খুব পুরনো তারকা কয়েকজন অবশ্যই থাকবেন। আর ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের দ্বাদশ সংস্করণ সম্ভবত তাদের জন্য শেষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট হতে চলেছে। এরপরই হয়ত বুটজোড়া তুলে রাখবেন তারা।

আরেকটা কথা শচীন টেন্ডুলকারের মতো ভাগ্য সবার হয় না। দেশের হয় ক্রিকেট খেলেছেন আবার বিশ্বকাপ জেতার জন্য অবসরকে দীর্ঘায়িত করে অপেক্ষাও করেছেন। শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরণ করেই বুটজোড়া তুলে রাখেন ক্রিকেট ‘গড’। তবে, ক্রিকেট বিশ্বে এমনও অনেক তারকা আছেন, যারা বড় মাপের ক্রিকেটার হলেও, ওই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত হতে দেখতে পারেননি। সেরা সময় পেরিয়ে আসায় ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে হয়েছে।

আজ আপনাদের জানাবো আসন্ন বিশ্বকাপ খেলে হয়ত বিদায় নিবেন এই চার কিংবদন্তি।

এক. লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা): অতীতে দিনে চামিন্ডা ভাস যেমন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সেরা ফাস্ট বোলার হয়ে উঠে এসেছিলেন। আধুনিক প্রজন্মে তেমনই উত্থান হয় মালিঙ্গার। কিন্তু, হাঁটুর চোট তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে বেশি বেশি ম্যাচ খেলা ছাড়তে হয়েছে সীমিত ওভারের স্পেশালিস্ট হিসেবে পরিচিত এই ফাস্ট বোলারকে। ডেথ ওভারে মালিঙ্গার স্লোয়ার ও ইয়র্কার বল খেলা খুব কঠিন। ৩৪ বছর বয়সে এসে পড়ায় ফাস্ট বোলার হিসেবে তার ক্যারিয়ার টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর নয় আর। ফলে, ২০১৯-এর পরই অবসর নিতে পারেন এই বিধ্বংসী। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট একাধিক তারকার অবসরের পর মুখ থুবড়ে না পড়লে এতোদিনে অবসর হয়ত নিয়েও নিতেন মালিঙ্গা।

অভিষেক: অস্ট্রেলিয়াতে মাররা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, ১লা জুলাই, ২০০৪।

এক নজরে মালিঙ্গার ক্যারিয়ার:

ওয়ানডে: ম্যাচ – ২০৪, উইকেট – ৩০১, ইকনমি – ৫.৩১, ৪/৫ উইকেট – ৯/৭ সেরা বোলিং – ৩৮/৬।
টি-টোয়েন্টি: ম্যাচ ৬৮, উইকেট-৯০, ইকনমি-৭.৩৬, সেরা বোলিং ৩১/৫।

দুই. শোয়েব মালিক (পাকিস্তান): আধুনিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে খেলা অন্যতম সেরা ব্যাটিং প্রতিভা। দেশের হয়ে অনেক ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলা শোয়েবের বিশ্বকাপ সফরে এবার সম্ভবত ইতি পড়তে চলেছে। কারণ, ৩৬ বছর পার করে গিয়েছেন তিনি। দু’দশক ধরে ক্রিকেটে খেলে চলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। এবারের বিশ্বকাপের এই অলরাউন্ডারের অভিজ্ঞতা তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে।

অভিষেক: ১৪ অক্টোবর, ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

এক নজরে ক্যারিয়ার :

ওডিআই: ম্যাচ – ২৬১, রান – ৬৯৭৫, গড় – ৩৫.২২, স্ট্রাইক রেট – ৮১.৭৭, ৫০/১০০ – ৪১/৯, সেরা স্কোর – ১৪৩। উইকেট পেয়েছেন ১৫৪টি, সেরা বোলিং ১৯/৪, ইকনমি ৪.৬৫।

টি-টোয়েন্টি: ১০৩ ম্যাচ, রান-২১২১, গড়-৩২.১৪, স্ট্রাইক রেট-১২২.৮৯, ৫০/১০০-৭/০,সেরা স্কোর ৭৫। উইকেট পেয়েছেন ২৮টি, সেরা বোলিং ৭/২, ইকনমি, ৭.১।

তিন. ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ): মালিকের মতো এই তালিকার দ্বিতীয় ক্রিকেটার যার অভিষেক গত শতাব্দীতে হয়েছিল। ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং জায়ান্ট তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিয়ারে অনেকটা পথ অতিক্রম করে ফেলেছেন। আগামী বছর যখন বিশ্বকাপের আসর বসবে, তখন তার ৩৯ বছর হয়ে যাবে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে আরো চার বছর টানা কোনওভাবে সম্ভব নয়। অবসর আসন্ন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বোলারদের মূর্তিমান বিভীষিকার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ২০১৯ বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ান টিমের জন্য বড় সম্পদ।

অভিষেক: ভারতের বিপক্ষে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে।

এক নজরে ক্যারিয়ার :

ওয়ানডে: ম্যাচ – ২৮১, রান – ৯৫৮৫, গড় – ৩৭.০০, স্ট্রাইক রেট – ৮৫.৮১, ৫০/১০০ – ৪৮/২৩, সেরা স্কোর – ২১৫।

টি-টোয়েন্টি: ম্যাচ-৫৬, রান- ১৬০৭, গড়-৩৩.৪৮, স্ট্রাইক রেট-১৪৩.১, ৫০/১০০-১৩/২, সেরা স্কোর-১১৭।

চার. এমএস ধোনি (ভারত): বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। ধোনি ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল নেতা। ২০১১’র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলার পথে। ২০১৫ সালেও গ্রেট ধোনি বিশ্বকাপ জেতার অনেক কাছে চলে গিয়েছিলেন। গতবারের সেমিফাইনালিস্ট ভারতীয় ক্রিকেট দলের নেতা এখন প্রাক্তন অধিনায়ক। ৩৭ বছর চলছে ধোনির। বয়স কারওর জন্য বসে থাকে না। সম্ভবত, ২০১৯-এর পরেই বুটজোড়া তুলে রাখতে চলেছেন মাহি।

অভিষেক: বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালে।
এক নজরে ক্যারিয়ার :

ওডিআই: ম্যাচ – ৩১৯, রান – ৯৯৬৭, গড় – ৫১.৩৭, স্ট্রাইক রেট – ৮৮.৪০, ৫০/১০০ – ৬৭/১০, সেরা স্কোর – ১৮৩*।

টি-টোয়েন্টি: ম্যাচ-৯৩, রান ১৪৮৭, গড়-৩৭.১৭, স্ট্রাইক রেট-১২৭.০৯, ৫০/১০০- ২/০, সেরা স্কোর-৫৬।