বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
মিরাজুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষক
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ
প্রশ্ন-১: অধিক খাদ্য উত্পাদনের মাধ্যমে আমাদের দেশের জনগণ কীভাবে উপকৃত হতে পারে?
উত্তর: অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বসতি স্থাপনের জন্য কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর ফলে কৃষি উত্পাদন কমে গেলে দেশে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে।
অধিক খাদ্য উত্পাদনের মাধ্যমে আমাদের দেশের জনগণ বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারে। যেমন:
অধিক খাদ্য উত্পাদন করতে পারলে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত খাদ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারব।
অধিক খাদ্য উত্পাদনের ফলে দেশের কৃষকগণ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
দেশের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে উপকৃত হবে।
আমাদের জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বাড়বে।
আমদানির পরিবর্তে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
প্রশ্ন-২: শ্রমশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?
উত্তর: শ্রমশক্তি হচ্ছে একটি দেশের দক্ষ জনশক্তি। শ্রমশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারি। যেমন:
শ্রমশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।
সমাজে বেকারত্ব লোকের সংখ্যা হ্রাস পায়।
পারিবারিক অর্থ কষ্ট দূর করা সম্ভব হয়।
বিদেশে নিজের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা যায়।
সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা যায়।
প্রশ্ন-৩: কারিগরি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?
উত্তর: কারিগরি প্রশিক্ষণ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়তা করে। কারিগরি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারি। যেমন:
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী দেশের শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অদক্ষ যুবক ও যুব মহিলাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
কারিগরি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি।
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে পারি।
কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে মানসম্মত কাজের সুযোগ লাভ করে।
মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
বিজ্ঞান
সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে চলমান মনে হয় কেন
হিমন এডওয়ার্ড গমেজ , সিনিয়র শিক্ষক
সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা
১) ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য ঋতু পরিবর্তন হয়। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় একপাশে একটু হেলে ঘোরে। পৃথিবীর এই হেলানো অবস্থাই ঋতু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। উত্তর গোলার্ধ যখন সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে তখন সূর্য রশ্মি অপেক্ষাকৃত খাড়াভাবে এসে এই এলাকায় পড়ে। এছাড়া হেলে থাকার জন্য উভয় গোলার্ধ এলাকা বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। অর্থাত্ সে সময় উত্তর গোলার্ধে দিন বড় হয় এবং রাত্রি ছোট হয়। বেশিক্ষণ ধরে সূর্য রশ্মি পাওয়ার ফলে ঐ এলাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে তখন ঐ উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল দেখা দেয়। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে এর ঠিক উল্টো ব্যাপার ঘটে। তাই সেখানে হয় শীতকাল। এভাবে বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তন ঘটে থাকে।
২) সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে চলমান মনে হয় কেন ? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পৃথিবী প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় নিজ অক্ষে সম্পূর্ণ ঘুরছে। এই ঘূর্ণন পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সম্পন্ন করে। পৃথিবীর এই ঘূর্ণনের কারণে সূর্য পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে তার অবস্থান পরিবর্তন করছে বলে মনে হয়। তাই প্রতিদিনের সূর্যকে দেখে মনে হয় যে, এটি সকালে পূর্ব দিকে উঠে এবং দিনের শেষে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়।
৩) পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়লে সূর্যের উচ্চতার কী ঘটে ? তখন দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের কী পরিবর্তন ঘটে ?
উত্তর : পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়লে সূর্য আকাশের অপেক্ষাকৃত উঁচুতে অবস্থান করে। এ সময় উত্তর গোলার্ধে সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দেয়। তখন উত্তর গোলার্ধে দিনের সময়কাল দীর্ঘ হয় এবং রাতের সময়কাল কম হয়। উত্তর গোলার্ধে এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে।
৪) কীভাবে সৌরজগত্, মিল্কিওয়ে, গ্যালাক্সি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কযুক্ত ?
উত্তর : সৌরজগত্ হলো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সদস্য এবং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি হলো মহাবিশ্বের অন্তর্ভুক্ত।
বিপুল সংখ্যক গ্যালাক্সি এবং এদের মধ্যবর্তী স্থান মিলে মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের অসংখ্য গ্যালাক্সির মধ্যে মিল্কওয়ে একটি গ্যালাক্সি। সুতরাং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের একটি সদস্য। সৌরজগত্ যে গ্যালাক্সির সদস্য তাকে বলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। সুতরাং বলা যায়, সৌরজগত্ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত সদস্য এবং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি মহাবিশ্বের সদস্য। এই সৌরজগত্ মহাবিশ্বের একটি সদস্যমাত্র।
বাংলা
মো. সুজাউদ দৌলা, সহকারী অধ্যাপক
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা
স্মরণীয় যাঁরা চিরদিন
প্রশ্ন-১। কোন সময়কে মুক্তিযুদ্ধের কাল বলা হয়?
উত্তর: যে সময়কে মুক্তিযুদ্ধের কাল বলা হয়: মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে এক গৌরবজনক অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নয় মাসকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল। এ নয় মাস যুদ্ধ করার পর আমরা জয়ী হই, পাই আমাদের স্বাধীনতা।
প্রশ্ন-২। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা কী করেছিল?
উত্তর: পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা শহরের মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলোতে চালায় নির্মম হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়াও সমস্ত শহরজুড়ে চলতে থাকে তাদের নির্মম আক্রমণ। শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, যুবতী কেউ তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেনি। গুলি চালিয়ে, গ্রেনেড ফাটিয়ে আর আগুন ধরিয়ে সমস্ত শহরকে তছনছ করে দিয়েছিল। শুধু ২৫শে মার্চ রাতেই নয়, এই হত্যাকাণ্ড চলতে থাকে পরবর্তী নয় মাস ধরে।
প্রশ্ন-৩। রাজাকার আলবদর আল-শামস্ কারা? তারা কী করত?
উত্তর: স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সকল বাঙালি পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে সহায়তা করত, তারাই রাজাকার ও আল বদর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এদেশের কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ফলে যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা এদেশে জুলুম চালায়, তখন তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের নানাভাবে সাহায্য করতে থাকে। পাকিস্তানিদের সাহায্যকারী এসব মানুষকেই রাজাকার, আল-শামস্ ও আলবদর বলা হয়।
তারা যা করত: রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস্ বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল পাকিস্তানিদের সাহায্য করা। মানুষের সম্পদ ও খাবার লুট করে এরা পাকিস্তানিদের দিত। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের গতিবিধির খবর পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে পৌঁছে দিত। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানিদের বাঙালি হত্যা পরিকল্পনাকে সফল করে তোলা।
মন্তব্য: রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস্ বাহিনী পাকিস্তানিদের সাহায্য করেছিল, স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছিল, আমরা তাদের ঘৃণা করব।
প্রশ্ন-৪। কে, কখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান?
উত্তর: সর্বপ্রথম বাংলা ভাষাকে যিনি রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান, তিনি হলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
বাংলাদেশ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের সাথে একত্রিত ছিল। আর তখন একটাই গণপরিষদ কার্যকর হত। সেটি হলো পাকিস্তান গণপরিষদ। যেহেতু বাংলাদেশের সকল মানুষের ভাষা ছিল বাংলা তাই তিনি ১৯৪৮ সালের পাকিস্তান গণপরিষদে দাবি জানান যে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হোক। মূলত বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার এটাই প্রথম দাবি ছিল।