চীনের মহাপরিকল্পনায় ভয়াবহ দুশ্চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্র

যে কোন দেশের যে কোন দোকানে ঢুকে দশটি পণ্য কিনুন। চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় এসব পণ্যের অর্ধেকই হয়তো চীনে তৈরি। মেড ইন চায়নার এই সাফল্যের পেছনের কাহিনী সবার জানা। এত সস্তায় আর কেউ এত জিনিস তৈরি করতে পারে না।

কিন্তু পণ্যের মান? মেড ইন চায়নার সমস্যাটা সেখানেই। তাদের পণ্যের মান ভালো নয় বলেই বেশিরভাগ মানুষের ধারণা। চীনের আরেকটি ব্যর্থতা, তারা এখনো বিশ্ববাজারে নিজেদের ব্র্যান্ডগুলি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, যেভাবে পেরেছিল আরেক এশিয়ান জায়ান্ট জাপান।

চীনা পণ্যের আরেকটি বদনাম হচ্ছে, তারা আসলে বাজারে চালু নামী-দামী ব্রান্ডগুলোর হুবহু নকল। তাদের কোন নিজস্বতা নেই। কিন্তু চীন এখন মেড ইন চায়নার এই ভাবমূর্তি আমূল বদলে দিতে চায়।

তারা একটা মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে। সেই পরিকল্পনার নাম, মেড ইন চায়না : ২০২৫। এই পরিকল্পনাটি নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে।

কী আছে এই পরিকল্পনায়?

চীনের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ম্যানুফাকচারিং খাত। সেই শক্তিকেই এখানে কাজে লাগাবে চীন। তবে এতদিন যেভাবে চলেছে সেভাবে নয়। একেবারেই ভিন্ন কৌশলে।

চীন এতদিন যেভাবে যে ধর-মার-কাট পণ্য তৈরি করে এসেছে, সেখানে একটা আমূল বিপ্লব ঘটানো হবে। পরিকল্পনাটি তিন ধাপের। ২০২৫ সাল সেই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মাত্র। ২০২৫ সাল নাগাদ চীন যত পণ্য তৈরি করবে; তার সবকিছুর মান তারা বাড়াতে চায়।

শিল্প-কারখানার উৎপাদনে তারা প্রয়োগ করবে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এমন কিছু চীনা ব্র্যান্ড তারা তৈরি করতে চায়, যেগুলো কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়বে বাকি বিশ্ব।

পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে ২০৩৫ সাল নাগাদ চীনা কম্পানিগুলো বিশ্বের বাকী সব কোম্পানিকে প্রযুক্তিতে, পণ্য মানে এবং সুনামে ছাড়িয়ে যেতে চায়। এজন্যে তাদের নতুন উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতে হবে।

আর ২০৪৯ সালে, আধুনিক চীন যখন তার প্রতিষ্ঠার একশো বছর উদযাপন করবে, তখন তারা ম্যানুফ্যাকচারিং এ বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হয়ে উঠতে চায়।

দশটি গুরুত্বপূর্ণ খাত:

এজন্যে চীন দশটি গুরুত্বপূর্ণ খাত চিহ্ণিত করেছে। এর মধ্যে আছে সেমিকন্ডাকটার চিপ থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ, রোবটিক্স থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক কার, হাইস্পীড রেলওয়ে থেকে ওশেন ইঞ্জিনীয়ারিং।

এই মহাপরিকল্পনায় সরকার বিপুল সহায়তা দিচ্ছে সব সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিকে।

এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যা যা দরকার, তার সবই করছে তারা। আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি গবেষণা এবং উদ্ভাবনেও (আরএন্ডডি) সাহায্য করা হচ্ছে।

সামরিক বাহিনী এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে বলা হচ্ছে।

মেড ইন চায়না : ২০২৫ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে চীনা কম্পানি আর চীনা ব্র্যান্ড বিশ্ব বাজারে চীনা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এটাই যুক্তরাষ্ট্রকে বিরাট দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

চীনের লেজার আক্রমণে দিশেহারা যুক্তরাষ্ট্র

চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে লেজার রশ্মি ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০ টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। যেখানে চীন লেজার ব্যবহার করা হয়েছে। খবর সিএনএন-এর।

সেনা মুখপাত্র বলেন, লেজারের আক্রমণে মার্কিন বিমান ক্ষতিগ্রস্থ হেয়েছে। আর এগুলোর উৎস চীন বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী এমন ঘটনার সন্মুখীন হয়েছে।

সর্বশেষ হামলাটি আগে পূর্ব আফ্রিকার আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে সংঘটিত ঘটনার অনুরূপ বলে মনে হয়। মার্কিন সামরিক বাহিনী যে লেজার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা মার্কিন বাহিনী কাছাকাছি অবস্থিত চীনা সামরিক ঘাটি থেকে এর উৎস বলে মনে করা হয়। সেসময় বিমানের পাইলট আহত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।

চীনের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল টাইমস ট্যাবলয়েড মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও অমূলক’ বলে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের হুঁশিয়ারি

চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, ওয়াশিংটন বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করলে দ্ইু দেশের মধ্যকার সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা অকার্যকর হয়ে পড়বে। চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ হে ও মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রোসের মধ্যে আলোচনার পর চীন জানায়, তারা অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে।

পাঁচ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ওয়াশিংটন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে বলে হুমকি দেয়ার পর মি. রোস চীন সফরে গেলেন। এ দিকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করায় জি-সেভেন দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করেছে। ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লা মেইর সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হবে।

বাণিজ্যের ব্যাপারে অন্য দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে বলে গত শনিবার টুইটারে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আরো বলেন, ইস্পাতের ওপর আরোপিত শুল্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত প্রস্তুতকারকদের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপসহ বিভিন্ন স্থানে মার্কিন প্রতিষ্ঠানসমূহ অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদেরকে স্মার্ট হতে হবে’।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বেইজিংয়ের আলোচনার সময় চীনা কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। আলোচনায় বিশেষ কোনো ফল আসবে না জানিয়ে মার্কিন পণ্য ও সেবা ক্রয় বাড়ানোর ব্যাপারে গত মাসে ওয়াশিংটনে যে চুক্তি হয়েছিল তা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ওয়াশিংটন বৈঠকে পৌঁছানো ঐকমত্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুইপক্ষই কৃষি, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো যোগাযোগ করছে এবং ইতিবাচক উন্নয়ন সাধন করতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া বাকি রয়েছে।’

কিন্তু চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাণিজ্যযুদ্ধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মাঝ পথে উভয়পক্ষকে আলোচনায় বসা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘সংস্কার এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি করাই হচ্ছে চীনের জাতীয় কৌশল। আমাদের এতদিনের প্রতিষ্ঠিত ছন্দ আমরা পরিবর্তন করব না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক আরোপসহ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে দেশ দু’টি এতদিন আলোচনার মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অগ্রগতি সাধন করেছে তা পুরোপুরি ব্যর্থ হবে।’

মহাকাশে চীনের বিস্ময়কর অগ্রগতি: চাঁদের কক্ষপথে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট

চীনই বিশ্বের প্রথম দেশ, যে দেশটি চাঁদের অন্ধকার পাশে পৌঁছাতে একধাপ অগ্রসর হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২৮ মিনিটে চীনের চেচিয়াও রিলে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। সিচুয়ান প্রদেশ থেকে লং মার্চ-৪সি রকেটে করে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

চাঁদের যে পাশে সূর্যের আলো পৌঁছায় না তা ভীষণ অন্ধকার। এখন পর্যন্ত চাঁদের ওই অন্ধকার পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারেনি কোনো মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। চেচিয়াও স্যাটেলাইট পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনের সাথে চাঁদে পাঠানো যানের যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে ।

উৎক্ষেপণের ২৫ মিনিট পর স্যাটেলাইটটি রকেট থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরপর সেটি পৃথিবী-চাঁদের ট্রান্সফার অরবিটে প্রবেশ করে। পৃথিবী থেকে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কিছু দিনের মধ্যে সেটি প্রবেশ করবে চাঁদের কক্ষপথে। চেচিয়াও হবে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছানো পৃথিবীর প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট।

এ বছরের শেষ দিকে পৃথিবী থেকে চাঁদে চাং’ই ৪ চন্দ্রযান পাঠাবে চীন। এটি আলু ও ফুলের বীজ বহন করবে । চাঁদে কৃত্রিম পরিবেশে ওই বীজ থেকে চারা গজানোর পরীক্ষা করা হবে। নার প্যালেস’ তৈরির পর সেই ‘চাঁদের প্রাসাদে’ বসে গবেষণা করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।

চেচিয়াও স্যাটেলাইট সাথে নিয়ে যাচ্ছে একটি রেডিও অ্যান্টেনা, যেটা মহাবিশ্বের সূচনাপর্বের রহস্য জানার চেষ্টায় সহায়ক হবে।