গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় পর্যায়ের ভোট হলেও সবার দৃষ্টি এখন গাজীপুরের দিকে। নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়; সে খবরের চেয়েও মানুষের বেশি আগ্রহ ইসি কি ভুমিকা পালন করে সেটা দেখার। ভোটাররা নির্বিঘœ ভোট দিতে পারলো কিনা; ভোট গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রশাসন নিরপেক্ষতা অবলম্বন করলো কিনা সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে মানুষ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেএম নুরুল হুদা বুধবার গাজীপুরে প্রার্থী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, গাজীপুর নির্বাচন খুলনার মতো হবে না। গাজীপুরে সুষ্ঠু ভোট না হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে’। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন সিইসি কথা রাখবেন তো?
‘গাজীপুরের নির্বাচন খুলনার মতো হবে না’ বলে সিইসি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা মানুষ অনুমান করতে পারে। এতোদিন পর সিইসি পরোক্ষভাবে স্বীকার করলেন খুলনায় ‘ভাল নির্বাচন’ হয়নি। মানুষ নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেনি। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রশাসনিক কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সে সময় সিইসি নীরবতা পালন করেন। তবে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালউদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে দাবী করেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি ও কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করায় নির্বাচন কমিশন সন্তুুষ্ট বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। ইসির সচিব সেদিন এমন সন্তুুষ্টির কথা জানালেও সিইসি ঘুমিয়ে ছিলেন কেন? নির্বাচন তদারকী করেন এমন সংগঠন সুজনের পক্ষ থেকে খুলনার ভোটে ‘ভদ্র কারচুপি’র অভিযোগ তোলা হয়। এখন সিইসি একেএম নুরুল হুদা গাজীপুরের ভোটারদের প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন এখানে খুলনার মতো নির্বাচন হবে না।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর আয়তনে গাজীপুর দেশের বৃহত্তম সিটি করপোরেশন। তবে ৫৭টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। ২৬ জুন গাজীপুরবাসী নৌকা না ধানের শীষের প্রার্থীকে ‘মেয়র’ বেছে নেয় সে অপেক্ষা চলছে। তবে গাজীপুরে সবচেয়ে যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নির্বাচনটি হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। মানুষ যাতে নির্বিঘেœ-নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন; এবং ভোটের নিরপেক্ষ গণণা সুষ্ঠু ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষ্য থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রশাসনের কিছু ব্যাক্তি নৌকার প্রার্থীর পক্ষ্যে কাজ করছে। আবার ধানের শীষের কর্মী সমর্থকদের পুলিশ হয়নারী করছে। ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়াদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ জন্য হাসান উদ্দিন সরকার সুষ্টু ভোটের জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে গাজীপুরে ধানের শীষ প্রতীকের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির নেতাদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, গাজীপুরে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার বা হয়রানি করা হয়নি। এটা অপপ্রচার ও মিথ্যে কথা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি এখনো দেশের মানুষ পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলের দাবির মুখে আইন সংশোধন করে স্থানীয় নির্বাচনে ‘এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন’ সিদ্ধান্ত মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। বিএনপি থেকে ইসির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করলেও সাধারণ মানুষ দেখতে চায় এক সময়ের ঝানু আমলা নুরুল হুদার নের্তৃত্বাধীন ইসি জাতিকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম। ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর। ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। দেশ-বিদেশের যারা ‘অংশগ্রহণমূলক’ জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন তারা গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে এই ইসির জন্য প্রি-টেস্ট হিসেবে দেখছেন। এই ইসি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম কিনা তার কিছুটা হলেও ধারনা পাওয়া যাবে স্থানীয় নির্বাচনে তাদের ভূমিকা ও আন্তরিকতার দেখে। তারা এটাই মনে করছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে সিইসির মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে ইসি নিজের মানমর্যাদা ক্ষুন্ন করতে চায় না। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি নির্বাচন কমিশনের মৌলিক দায়িত্ব। সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখাতে চাই, ইসি গণতান্ত্রিক পথেই আছে। নির্বাচনে নিরপেক্ষতা, শূন্যসহিষ্ণু নীতি (জিরো টলারেন্স) মেনে চলা হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কেউ নির্বাচিত হয়ে যাবেন এটি ভাববেন না। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গাজীপুরের প্রার্থী ও ভোটারদের যে বার্তা দিলেন সিইসি কী তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন? সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারে গাজীপুর নির্বাচনে ইসির কঠোর নিরপেক্ষতা এবং জিরো টলানেন্স নীতি গ্রহণের বিকল্প নেই। সিইসি সেটা করেন কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে মানুষ।
উৎসঃ ইনকিলাব