ঈদ মানে এক অন্য রকম আনন্দ: শরীফ সাথী

ঈদ মানে এক অন্য রকম আনন্দ
শরীফ সাথী

ঈদ মানে খুশি, আনন্দ। উৎফুল্লতায় ভরপুর। এক সাথে চলা ধনী গরীব বৈষম্য ভুলে। অনাবিল ছোঁয়া মুসলিম ঘরে ঘরে। মায়াময় ছায়াময় অনুভবে মমতার অনুভূতি বিকশিত। ঈদের খুশিতে দিন কাটানো আমার ছন্দালাপ, বাড়ির সকল জনে বলে/ খুশির বন্যা বয়ে চলে/ হরেক খাবার খেয়ে দেয়ে ঈদের দিনে আমারতো, নতুন পোশাক গায়ে পোরে/ বন্ধু সবাই হাতটি ধরে/ শহর গাঁয়ে ঘুরে বেড়ায় পালিয়ে যায় আঁধারতো।
শহর কিংবা বিদেশ হতে দেশে ফিরে পরিবারে সকল সদস্যদের নিয়ে একত্রে ঈদ করা মানে এক অন্য রকম আনন্দ। যেখানে বাবা মায়ের মুখ, সুখ ছোঁয়া মায়া। “বাবা মায়ের সেবা করা আমার প্রথম কাজ/ তাইতো ছুটি পেয়ে আমি যাচ্ছি বাড়ি আজ/ বাবার স্নেহ মায়ের আদর সত্য ভালো চিনেছি/ সেই মা বাবার জন্য আমি নতুন পোশাক কিনেছি/ নাড়ির টানে ফিরে নীড়ে বাবা মায়ের মুখ/ দেখে আমি কাটাতে চাই
ঈদ আনন্দের সুখ ৷
পথ শিশু বা টোকাইয়ের ঈদে ধনীর দ্বারে দ্বারে চাওয়া, দাওনা একটি নতুন পোশাক কিনে। সবার মত আমরাও সবার সাথে হাসি মুখে ঈদ উদযাপন করি। “ক্ষুধার জ্বালায় দিনে রাত্রে হয়ে আছি কাবু/ একটি জামা দাওনা কিনে ওগো ধনী বাবু/ পথেই আমরা ঘুরিফিরি পথেই করি বাস/ টোকাই বলে কত জনে করে উপহাস/ সবার মত ঈদের দিনে নতুন পোশাক চাইতো/ বারেবারে ঘুরছি দ্বারে দু’হাত পেতে তাইতো/ ঈদের খুশি সবার সাথে ভাগাভাগি করতে/ পাখির মত বেরিয়েছি এগাঁ সেগাঁ চরতে।
নতুন নতুন পোশাকের ঘ্রান প্রান জুড়ায়। গায়ে পরে বন্ধু বান্ধব মিলে নামাজ শেষে ঘুরে বেড়ানো মূহুর্ত সত্যিই কত যে ভালোলাগা। হৈ-হুল্লোড় খুশির পশরা চারিদিকে ছড়ানো। তাই বলতে ইচ্ছে করে- ঈদের পোশাক নিত্য নতুন হোক না যত দামি, সারাটিদিন গায়ে পরে ঘুরে বেড়ায় আমি/ নামাজ শেষে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আমার সঙ্গে, ঈদ আনন্দে মাতামাতি করি সোনার বঙ্গে।/ হৈ-হুল্লোড় খুশিতে মন তাকধিনাধিন নাচে, ঈদ আনন্দ ঈদ আনন্দ যেন সবার কাছে।
ঈদের দিন ব্যাতিক্রম আয়োজন আমার প্রিয়জনকে নিয়ে নদীর তীরে বসে বৈকালী হাওয়ায় চাওয়া পাওয়ায় শুধু দুজনা। নয়নের মিষ্টি চাহনী ঠোঁটের মধুর হাসির মাখামাখি দৃশ্য নদীর ঝরণা জলের স্বচ্ছ পর্দায় দেখবো। ঠিক যদি আমার সময়ে প্রিয়জনের সময় হয়। অবলিলায় মুখে ভাসে আমার – ঈদ খুশিতে আনন্দেতে মনটা আমার নাচে, নতুন নতুন পোশাক হবে ইচ্ছে এমন আছে।/ তাইতো বাবার কানের কাছে তুলি গানের ছন্দ, এবার ঈদে এরূপ চাওয়া নয়তো মোটে মন্দ/ নতুন পোশাক গায়ে পোরে
ঘুরবো সারাদিন, বন্ধু মিলে খাওয়া দাওয়া দিন হবে রঙিন।
গ্রাম গঞ্জে কিছু কিছু কষ্টমাখা জীবনে ঘটে যাওয়া কেনাকাটার দৃশ্য সত্যিই হৃদয় বিদারক। তাই ছন্দ তালে বলতে বলতে থাকি- এলো এলো ঈদের বাজার এলো কেনাকাটা, ঋৃণের দেনা সাটা আমার ঋৃণের দেনা সাটা।/ লেগে আছে অভাব পিছু/ হাজার টাকায় হয়না কিছু/ এ কোন যে যুগ এলো, লজ্জায় মাথা খেলো আমার লজ্জায় মাথা খেলো/ ছেলে মেয়ে নিয়ে গেলাম কিনতে পোশাক মার্কেটে, রঙিন রঙিন চয়েজ দেখে/ অনেক দামের ভয়েস দেখে/ ভেবে নিলাম যাবে আজি এই পকেটের তারকেটে/ ছোট্ট দোকান খুঁজলাম, এই মার্কেটে তা হবে না ঘুরে ঘুরে বুঝলাম/ বুঝে কয়ে ফিরলাম বাড়ি, ছেলে মেয়ের বেজায় আড়ি/ এসব কথা ভেবে ভেবে কখন যে রাত গেছে, হালের গরু বেঁচে/ করতে হলো অবশেষে ঈদের কেনাকাটা, পিছন ফিরে চাইতে দেখি/ মনে ঝেঁকি দিচ্ছে একি/ সব মানুষই হয়না সুখি/ কেউ নাতো কেউ থাকে দুখি/ ব্যর্থ জীবন খাটা আমার ব্যর্থ জীবন খাটা, ঋৃণের দেনা সাটা আমার ঋৃনের দেনা সাটা।
ঈদের আগের সন্ধায় চাঁদ দেখার মজাটা খুবই নান্দনিক। অনেক অনেক জন একত্রে আকাশের দিকে তাকানো সে এক অন্য রকম আনন্দ। “ঈদ এসেছে তাই ভেসেছে ওই আকাশে চাঁদ, দলে দলে দেখছে সবাই খুশিতে অবাধ। মুসলমানের ঘরে ঘরে সুখের স্বপ্ন নিদ, ধনী-গরীব সবাই জানায় ঈদ মোবারক ঈদ।
ঈদ খুশিতে আমার চোখ নাচে। মন নাচে। আমার প্রতিদিনের ক্ষন নাচে। আনন্দে উদ্বেলিত হয় আমার লালিত স্বপ্ন। আকাঙ্খার নতুন পোশাকের ঘ্রাণ, প্রাণ জুড়ায় আমার। মজাদার খাবার পাবার প্রত্যাশা, বন্ধু সবে মিলে একত্রে খেয়েদেয়ে বেড়ানোর মূহুর্ত সত্যিই আমার এক অন্যরকম ভাললাগার নিদারুণ আবেগী অনুভূতি। “ঈদের দিনে সবাই মিলে ঘুরবো শুধু ঘুরবো, পথে ঘাটে/ সবুজ মাঠে/ এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে/ পাখির মত নেচে গেয়ে উড়বো শুধু উড়বো/ ঈদের দিনে সবাই মিলে ঘুরবো শুধু ঘুরবো/ পাড়ায় পাড়ায় এ গাঁ সে গাঁ বন্ধু সবে মিলবো/ হরেক রকম ভোজন ভাজন সবাই মিলে গিলবো/ রঙিন পোশাক গায়ে পরে/ নিত্য নতুন বাইক চড়ে/ হেসে খেলে দুচোখ মেলে দৃষ্টি দূরে ছুড়বো/ ঈদের দিনে সবাই মিলে ঘুরবো শুধু ঘুরবো/ হই হুল্লোড় আনন্দেতে কাটবে সারাদিন/ এমন দিনে অন্তরেতে সুখ যে সীমাহীন/ দল বাঁধিয়া কত খেলা/ হাসি খুশির মিলন মেলা/ মাংস রুটি পোলাও মিষ্টি কত কিছু জুড়বো/ ঈদের দিনে সবাই মিলে ঘুরবো শুধু ঘুরবো।
ঈদে চোখে চোখে চাওয়া তোমার আমার। খুশির ইমেজ তখনই পূর্ণতা পায়। যখন প্রেয়সীর চোখে, চোখের চাওয়া অম্লান হয়। ঠিক অনাবিল মূহুর্তে আমার শিহরিত কম্পন, ভালোলাগার ছোঁয়ানুভূতি, ভালোবাসার পূর্ণতা তৃপ্ততায় ভেজা কামনার বীজ বপনে স্বপনের সত্যতায় সভ্যতার রসাত্ব মিলন। চোখে চোখে চেয়ে, বেয়ে যায় শান্তির পালক দ্বিধাহীনভাবে। “সুখের স্বপ্নে ভাসছে দু’চোখ/ ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক/ ধনী গরীব এক কাঁতারে দাঁড়ায়/ একে অন্যের প্রতি দু’হাত বাড়ায়/ খুশি নিয়ে রঙিন/ এলো এলো সেই দিন/ সকল মুমিন মুসলমানের জানায়/ হাসি খুশির জোয়ারে ঈদ মানায়/ ঈদের নামাজ শেষে/ মিষ্টি মুখে হেসে/ ভালবেসে কোলাকুলি মিশায় বুকে বুক/ পেতে সবাই সবার কাছে আত্মতৃপ্ত সুখ।
এসো সবাই ঈদে এক হই। ভুলে যায় হিংসা বিদ্বেষ। এক কাতারে ঈদের নামাজ পড়ি। নামাজ পরবর্তী বুকে বুক মিশিয়ে কোলাকুলি করে গ্লানী ঝেড়ে প্রশান্তি খুঁজি।