এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ভয়ে আছে কেন সৌদি আরব?

সাম্প্রতিক সময়ে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। বিশেষ করে যখন তুরস্ক ও কাতার (দুটোই মুসলিম দেশ) রাশিয়ার কাছ থেকে এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ঘোষণা দেয় তখন থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব (মূলত সৌদির মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ)।

সৌদি আরব বলেছে, কাতার যদি রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনে তাহলে দেশটির ওপর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া (হামলা) হবে। যদিও কাতার এটা তাদের নিজস্ব বিষয় বলে রিয়াদের হুমকি প্রত্যাখ্যান করেছে। পাশাপাশি মস্কো কোনো রকম রাগঢাক না করেই বলে দিয়েছে, মূলত সৌদিকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কাতারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে যাতে দোহা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র না কেনে। কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের ব্যবসায় প্রভাব পড়বে। তবে দোহার কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি থেকে মস্কো সরে আসবে না বলেও জানায় রাশিয়া।

প্রসঙ্গত, তুরস্ক ও কাতারের আগেই রাশিয়ার কাছ থেকে সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তি ক্রয় করেছে ভারত। এমনকি বর্তমান বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র চীনও রাশিয়ান এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করেছে।

তুর্কি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা দেশটির (তুরস্ক) কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, তারা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনলেও যেন ব্যবহার না করে। এর জবাবে গতকাল মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ান বলেছেন, তারা গুদামে ভরে রাখার জন্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে না। বরং প্রয়োজনে তারা এটি কাজে লাগাবে।

রুশ গণমাধ্যম আরটি ডটকম এক প্রতিবেদনে বলেছে, যখন কোনো দেশ এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের কথা বলছে তখনই ওয়াশিংটন সেই দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিচ্ছে। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের এই উদ্বেগ কেন, এর ক্ষমতাই বা কেমন?

এস-৪০০ রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি মূলত রাশিয়ার এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত ভার্সন। এর নকশা করেছেন আলমাজ-অ্যান্টে। আর এটি উৎপাদন করছে ফাকেল ম্যাশিন-বিল্ডিং ডিজাইন ব্যুরো।

সর্বাধুনিকি প্রযুক্তির এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রে আঘাত হানতে সক্ষম। এর একটা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় ৮টি স্তর রয়েছে। ৭২টি লাঞ্চারকে এক সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই সিস্টেম। ৩৮৪টি মিসাইলকেও একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার।

বহুমুখী আক্রমণ তথা নানা দিক থেকে আক্রমণ করা হলেও এর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তাকে রুখতে পারবে। এক সঙ্গে ৩০০টি টার্গেটের ওপর নজরদারি চালাতে পারবে। এর স্বয়ংক্রিয় মিসাইল ব্যাটারি এক সঙ্গে ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি লক্ষ্যভেদেও ব্যাপক কার্যকর।

এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কোনো দেশের আকাশ সীমায় স্টেল্থ ফাইটার গোত্রের যুদ্ধবিমানকে প্রতিহত করতে পারবে। স্টেল্থ ফাইটার গোত্রের যুদ্ধবিমান আকাশে নিজের অস্তিত্বকে এতটাই লুকিয়ে রাখতে সক্ষম যে সাধারণ রাডারে তা ধরা পড়ে না। তবে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ক্ষেপণাস্ত্র পরিকাঠামোয় এমন এক শক্তিশালী রাডার থাকবে, যার কারণে স্টেল্থ ফাইটারও তাকে ফাঁকি দিতে পারবে না।
শুধু যুদ্ধবিমান নয়, আকাশপথে ধেয়ে আসা যেকোনো বিপদকেই রুখে দিতে পারবে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। আকাশ সীমার দিকে প্রতিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে এলেই এস-৪০০ ট্রায়াম্ফের স্বয়ংক্রিয় মিসাইল ব্যাটারি বা লঞ্চ প্যাড থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে গিয়ে মাঝ আকাশে প্রতিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে দেবে।

আরটি ডটকম বলছে, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে হামলার ক্ষেত্রে প্যাট্রিয়টের গতির চেয়ে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রের গতি দ্বিগুণ। তাছাড়া হামলার ক্ষেত্রে রেঞ্জ বা দূরত্বের পার্থক্যও রয়েছে। আর সে কারণেই ওয়াশিংটনের এই উদ্বেগ।