ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চাঁদপুর গ্রামের জাহের মিয়া ১৩ বছর আগে জীবীকার তাদিকে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। জাহের মিয়া বিদেশ যাওয়ার পর থেকে তার আর কোন খুজ পাওয়া যাচ্ছিলা । দীর্ঘদিন খোঁজ না থাকায় জাহের মিয়ার পরিবারের সদস্যদের ধারণা ছিলো হয়তো কোন দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।
তার বেঁচে থাকার খবরে আনন্দে উদ্বেলিত স্ত্রী পেয়ারা বেগম ও তার তিন সন্তান কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমিতি মালয়েশিয়ার সহযোগিতায় সম্প্রতি স্মৃতিশক্তি হারানো মানসিক ভারসাম্যহীন জাহেরকে পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রাহাদুজ্জামান জানান, প্রায় দেড় বছর আগে অসুস্থ জাহেরকে কে বা কারা কুয়ালালামপুরের অদূরে ক্লাং হাসপাতালের সামনে ফেলে রেখে চলে যায়।পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক চিকিৎসায় তার জ্ঞান ফিরে আসলেও জাহেরের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায়।
কোন স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বাংলাদেশ হাইকমিশনকে অবহিত করে।তবে হাইকমিশন পড়ে বিপাকে, লোকটি বাংলাদেশি নিশ্চিত হওয়া গেলেও জাহের তার ঠিকানা লিখতে বা বলতে পারে না। পরিচয় খুঁজতে নানা পদ্ধতি অবলম্বন করলেও দীর্ঘ সময়ে কোন খোঁজ মেলেনা।
এ অবস্থায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় মালয়েশিয়াস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রাহাদুজ্জামানসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা। কারণ বাংলাদেশের ম্যাপ দেখিয়ে তারা অনেকটা নিশ্চিত হয় যে লোকটির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
সম্প্রতি চাঁনপুর গ্রামে লোকটির ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা জাহের মিয়ার পরিচয় নিশ্চিত করেন। শুরুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি পুরো বিষয়টা। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে কোনা যোগাযোগ না থাকায় তাদের ধারণা ছিলো জাহের মিয়া মারা গেছেন।তার বেঁচে থাকার খবরে আনন্দে উদ্বেলিত স্ত্রী পেয়ারা বেগম ও তার তিন সন্তান কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।তবে জাহের মিয়ার দেশে ফেরার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কয়েক লক্ষ রিঙ্গিতের ঋণের বোঝা।
অসচ্ছল পরিবারের পক্ষে এই টাকা সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।মালয়েশিয়াস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমিতির উদ্যোগে, বাংলাদেশ হাইকিমিশনের সহযোগিতায় ৩ জুন বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে মানসিক ভারসাম্যহীন জাহেরকে দেশে পাঠানো হয়েছে।
অসহায় জাহেরকে দেশে পাঠিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক স্ট্যাটাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রাহাদুজ্জামান লিখেছেন, আজ মনে হচ্ছে মানবতা এখন ও উজ্জীবিত, সত্যি প্রবাসে এসোসিয়েশন গড়ার সার্থকতা খুঁজে পাওয়া গেল। যার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এসোসিয়েশন তথা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর সুনাম অর্জন হবে বলে আশা করছি।