গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থ বছরেও মালয়েশিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স প্রবাহ। বৈধ পথে সুযোগ সুবিধার অভাবে হুন্ডিসহ নানা অবৈধ মাধ্যমে টাকা পাঠানো, মালয় রিঙ্গিতের মান কমে যাওয়া এবং অবৈধ কর্মীরা রি-হায়ারিংয়ের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ নেয়ায় রেমিটেন্স প্রবার কমেছে বলে অভিমত মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের।
অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, প্রবাসী আয় আহরণে আরও তৎপর হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাগিদ দিয়েছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশন।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় দশ লাখ। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এই দেশটিতে ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশী কর্মী আসার সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকায় প্রতিবছরই বেড়েছে প্রবাসী আয়। তবে, গত কয়েক বছরে ভাটা পড়েছে রেমিটেন্স প্রবাহে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে একশো ৩৩ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এলেও, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা এসে ঠেকেছে, একশো দশ কোটি ৩৬ লাখ মার্কিন ডলারে। আর, চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার, যা, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার কম।
অবৈধ মাধ্যমে টাকা পাঠানোসহ নানা কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে বলে মনে করেন অভিবাসী বাংলাদেশিরা।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, ‘মালয়েশিয়ার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল। একসময় এক রিঙ্গিতের বিপরীতে ছিলো ২৫ টাকা আর এখন ১৯ থেকে ২০ টাকা।’
আরেক ব্যবসায়ী এস এম রহমান পারভেজ বলেন, ‘পুরোটাই চলে যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। রেমিটেন্স ঠিকই যায় কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের খাতায় সেটা এন্ট্রি হয় না।’
স্বজনদের কাছে দ্রুত টাকা পাঠানোর নানা সুবিধা পেয়েই বিকল্প মাধ্যম বেছে নেয়ার কথা জানান এর সাথে সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, জরুরি দরকার হলে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেন। যখন বিকাশে টাকা পাঠানো হয় তখন একটা নম্বর দিচ্ছে যে নম্বরটি দেখালেই ক্যাশ দিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া বিকাশের পথটা সবচেয়ে দ্রুত। চব্বিশ ঘন্টায় এ সার্ভিস গ্রহণ করা যায় বলেও জানান প্রবাসীরা। যেখানে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে সময় বেশি লাগে এবং ভিসা দেখাতে হয়।
বৈধ প্রক্রিয়ায় প্রবাসী আয় আহরণে তৎপর হওয়ার পাশাপাশি অবৈধ পথে টাকা পাঠানো বন্ধে উদ্যোগ না নিলে রেমিটেন্স প্রবাহে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা তাদের।
এদিকে, প্রবাসী আয় আহরণের প্রক্রিয়া সহজ করাসহ তা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে জানান, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাই কমিশন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার কাউন্সিলর মোহাম্মদ সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রেরণে আমরা কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আমরা বলি, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা তারা যেনো বৈধ পথে দেশে পাঠায়। মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমারা সভা করেছি। এদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর যতো রেমিটেন্স হাউজ আছে তাদের সঙ্গে সভা হয়েছে যে, কিভাবে এই মাধ্যমে টাকা পাঠানোর বাড়ানো যায়।’
বৈধপথে টাকা পাঠাতে প্রবাসী কর্মীদের সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন এই কর্মকর্তা।