স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতার উপর প্রতিষ্ঠিত দাম্পত্য জীবন। একই ছাদের তলায়, একই বিছানায় থাকতে থাকতে তৈরি হয় এক ধরনের মায়া। তাদের মধ্যে যৌনতা, সঙ্গম, সৃষ্টির আদিকাল থেকে ঘোর বাস্তব। মানুষ হোক বা পশুপাখি, একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বংশবৃদ্ধি করা জীবের বৈশিষ্ট্য।
সামাজিক আদর্শ অনুযায়ী, বিয়ের পর পুরুষ এবং নারীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠা স্বাভাবিক। তার মধ্যেই আগামী প্রজন্মের জন্মের বীজ লুকিয়ে থাকে। কিন্তু মিলিত হতে যদি ভয় পান স্বামী-স্ত্রী? জাপানের এক দম্পতি কিন্তু সত্যি সত্যিই সঙ্গম করতে ভয় পেতেন, ছিল লজ্জাও। যৌনতার কথা ভাবলেই নাকি লজ্জায় লাল হয়ে উঠতেন তারা। আর এই সঙ্গমই মৃত্যু ডেকে এনেছিল তাদের।
জাপানের টোকিয়োর বাসিন্দা সাচি হিডাকা এবং তার স্ত্রী টোমিয়ো। যে সঙ্গমকে সকলে চেনেন তৃপ্তির অভিব্যক্তিতে, সেই সঙ্গমেরই প্রাণঘাতী রূপ এই জাপানি দম্পতিকে স্মরণীয় করে রেখেছে। দীর্ঘ ১৪ বছর দাম্পত্যজীবন যাপন করেছিলেন হিডাকা এবং টোমিয়ো।
সামাজিক নিয়ম মেনে তাদের বিয়ে হয়েছিল। একসঙ্গে সংসারও করেছেন। একই বাড়িতে থেকেছেন। শুয়েছেন একই ছাদের তলায়। কিন্তু তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক ছিল না। হিডাকা এবং টোমিয়ো সঙ্গমে এতই লজ্জা পেতেন যে, একসঙ্গে বাস করলেও মিলিত হওয়ার কথা কখনো ভাবেননি। তারা মিলিত হওয়ার প্রক্রিয়া জানতেন। কিন্তু লজ্জাই তাদের কাল হয়েছিল।
১৪ বছর সংসার করার পর এক দিন এই জাপানি দম্পতি লজ্জা, ভয়, কুণ্ঠা দূরে সরিয়ে সঙ্গম করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা দু’জনেই সেই রাতে নেশা করেছিলেন। নেশার ঘোরেই সঙ্গমের ইচ্ছা, পরিকল্পনা তাদের মাথায় এসেছিল। হিডাকা, টোমিয়ো লজ্জা কাটিয়ে উঠে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন যৌন পরিতৃপ্তির আস্বাদ। কিন্তু তারা জানতেন না, এই প্রথম সঙ্গমই হবে তাদের নিশ্চিন্ত, নিস্তরঙ্গ জীবনের শেষ উন্মাদনা।
স্বামী, স্ত্রী একসঙ্গে ওয়াইনের বোতল খুলে বসেছিলেন। শারীরিক এবং মানসিকভাবে তারা মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। তারপর একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন, ১৪ বছরে প্রথম বার। কারো চেষ্টা বা উন্মাদনায় কোনো কমতি ছিল না। রাতের অন্ধকারে উদ্দাম যৌনতায় মেতে উঠেছিলেন দম্পতি। সঙ্গমের স্বাদ উপভোগও করেছিলেন।
কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি। জীবনে প্রথম বার মিলিত হয়ে যৌন উত্তেজনায় তাদের হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে গিয়েছিল। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন হিডাকা, টোমিয়ো দু’জনেই। সেই রাতেই তাদের মৃত্যু হয়। কেউ কেউ বলেন, অর্গাজমের তৃপ্তি পেয়েছিলেন হিডাকা, টোমিয়ো। তাই মৃত্যুর পরেও তাদের মুখে লেগে ছিল তৃপ্তির হাসি। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হিডাকা, টোমিয়োর বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর। চিকিৎসকেরা জানান, এই বয়সে প্রথম সঙ্গমের ধাক্কা নিতে পারেনি দম্পতির হার্ট। তবে আগে থেকে তাদের কারো কোনো হার্টের সমস্যা ছিল না। মূলত বিস্ময়ই এই মৃত্যুর কারণ।
জাপানি দম্পতির জীবনের সত্য ঘটনা পরে ফুটিয়ে তোলা হয় পর্দার কাহিনিতেও। ২০০৯ সালের ‘ডেথ বি নট স্টুপিড’ নামক সিরিজ়ের একটি এপিসোড তৈরি হয়েছিল হিডাকা এবং টোমিয়োর মৃত্যুর কাহিনি দিয়েই।
চিকিৎসকদের একাংশ অবশ্য দাবি করেছেন, সঙ্গম করতে করতে হৃদ্রোগের আশঙ্কা অতি বিরল। মিলনের উত্তেজনায় কখনও মৃদু হৃদ্রোগ হলেও তা থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা আরও কম। এ ক্ষেত্রে, পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি নিরাপদ।