২০২১-২০২২ অর্থ বছর শেষে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা ছিল সাড়ে ৬২ লাখ। যা পরবর্তীতে জুলাই মাসে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭৬ লাখে। ধীরে ধীর যা বৃদ্ধি পেয়ে আজ ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮২ লাখ।
টিআইএনধারীদের সংখ্যা প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি পেলেও এখনো বাড়েনি কাঙ্ক্ষিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সংখ্যা। গত অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল করা করদাতা সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ হলেও চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের এখন পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন প্রায় সাড়ে ২১ লাখ করদাতা।
সময় বৃদ্ধির আবেদন ও আগামীকাল ৩০ নভেম্বর শেষ দিনের রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা যোগ করলে সেই সংখ্যা ৩০ লাখও হবে না বলে মনে করছে এনবিআর সংশ্লিষ্টরা। অথচ ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। এনবিআরের প্রত্যাশা ছিল টিআইএনধারীদের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবে। কিন্তু যে হারে রিটার্ন দাখিল হচ্ছে সেই লক্ষ্য থেকে ঢের পিছিয়ে রয়েছে
যদিও এনবিআরের আয়কর বিভাগ মনে করে চূড়ান্ত হিসাবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। এছাড়া নতুন করে সময় বৃদ্ধি ও জরিমানা দিয়ে রিটার্ন দাখিলের আবেদন বিবেচনা করলে হয়ত প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে মনে করে এনবিআরের আয়কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে এনবিআরেরর এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, করদাতা বৃদ্ধি করতেও বিভিন্ন সেবামূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে। সকল পর্যায়ের গ্রাহককে রিটার্নের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এছাড়া করদাতাদের সুবিধার জন্য অটোমেশনসহ নানা পদক্ষেপের দিকে নজর দিয়েছি। ধীরে ধীরে করদাতাদের ভীতি কমে যাচ্ছে। একদিন এনবিআরের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবেই।
এর আগে ২০২০-২১ করবর্ষে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ ৪২ হাজার করদাতারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিল। আর রিটার্ন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার। যদিও সবমিলিয়ে ওই অর্থবছরে ২৪ লাখ করদাতার আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিল।
অন্যদিকে, করদাতাদের প্রত্যাশা পূরণে এবারও এক ছাদের নিচে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে দেশের ৩১টি কর অফিসে গত ১ নভেম্বর থেকে মেলার পরিবেশে করদাতাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে কারণে রিটার্ন দাখিলের বিকল্প নেই ই-টিআইএনধারীদের। তা না হলে পড়তে হবে নানা জটিলতায়।
সাধারণত কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে চার লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
এ ছাড়া আরও অনেক কারণে ব্যক্তিকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। চলতি অর্থবছর থেকে শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই হবে না, বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রও দেখাতে হবে।