ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, মার্কিন ডলারের রেট কমে গেছে ১০ টাকা, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান দাঁড়িয়েছে ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা, চীনের মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেনের সিদ্ধান্তে টাকার মান ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে ইত্যাদি। এমনকি গুগল সার্চ করে মানি এক্সচেঞ্জ অপশনে গিয়ে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রায় মূল্য দেখতে চাইলে ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা দেখাচ্ছে।
তবে এসব তথ্যের কোনোটিই সঠিক নয় বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাফেদাসহ সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যে রেট দেয়া আছে, সেটিই ডলারের রেট। বাফেদার নির্ধারণ করা রেটই দেওয়া আছে। এ রেটেই ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচা করছে। কোথায় কে কী বলল বা লিখল, তা সঠিক নয়
তাহলে সঠিক তথ্য কোনটি— জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যে রেট দেয়া আছে, সেটিই ডলারের রেট। বাফেদার নির্ধারণ করা রেটই দেওয়া আছে। এ রেটেই ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচা করছে। কোথায় কে কী বলল বা লিখল, তা সঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যেটি আছে, সেটিই সঠিক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘টাকার বিনিময় মূল্য’ অংশে বলা হয়েছে, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তব্যাংক ও গ্রাহক লেনেদেনের জন্য টাকার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১০৪ টাকা। ১৫ সেপ্টেম্বরের দেওয়া এ রেট এখনো অপরিবর্তিত আছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১০৪ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাফেদা ও এবিবির যৌথ বৈঠকে গত সপ্তাহে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই রেটেই ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচা করছে। এ পর্যন্ত পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া ডলার রেট
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা এবং বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়ন রেট ৯৯ টাকা দিচ্ছে। দুটোর ওয়েট অ্যান্ড এভারেজ করে আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। এটিই সঠিক তথ্য।
এদিকে, চীনা মুদ্রায় লেনদেন চালু হয়েছে, এ খবরে ডলারের দরপতন হয়েছে— অনেকে ফেসবুকে এমন পোস্ট দিচ্ছেন। সেখানে অনেকে লিখেছেন, চীনের মুদ্রা ইউয়ানে (সিএনআই) লেনদেন চালু হয়েছে, এলসি নিষ্পত্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে; এজন্য ডলারের রেট ১০ শতাংশ পতন হয়েছে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্য বাড়ায় ২০১৮ সালে ইউয়ানে লেনদেন ও এডি ব্যাংকগুলোকে দায় নিষ্পত্তির জন্য হিসাব খোলার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের সার্কুলারের সুযোগকে আরও বড় পরিসরে করতে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্য বাড়ায় ২০১৮ সালে ইউয়ানে লেনদেন ও এডি ব্যাংকগুলোকে দায় নিষ্পত্তির জন্য হিসাব খোলার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের সার্কুলারের সুযোগকে আরও বড় পরিসরে করতে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফেসবুকে সাধারণ মানুষ যেসব পোস্ট দিচ্ছেন, তা না বুঝেই দিচ্ছেন। এসব পোস্টের তথ্য সঠিক নয়।
রোববার কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ডলার ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।