উচ্চ তাপমাত্রায় বা খোলা আগুনে রেড মিট ও প্রক্রিয়াজাত মাংস পোড়ালে মাংসের মধ্যে যে যৌগ উপাদান থাকে তা বিভিন্ন যৌগ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্সিনোজেনিক যৌগের সৃষ্টি করে। এসব কার্সিনোজেনিক উপাদান আপনার ডিএনএ পরিবর্তন করে দিতে পারে।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি গবেষণা চালান। তাতে দেখা যায়, আগুনে ঝলসানো মাংসে বেশি পরিমাণে কার্সিনোজেনিক থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এ সংক্রান্ত গবেষণার বেশিরভাগই গবেষণাগারের খাবার এবং প্রাণীদের ওপর করা হয়েছে।
২০১১ সালের একটি গবেষণায় জানা যায়, রান্না করা লাল মাংস বা রেড মিটে অল্প পরিমাণে হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস (এইচসিএএস) নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে আছে যাকে কিছু বিশেষজ্ঞরা হেটেরোসাইক্লিক অ্যারোমেটিক অ্যামাইনস (এইচএএএস) হিসাবেও উল্লেখ করেন। আরো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যার নাম পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচএস)। এগুলো সবই ক্যান্সার তৈরিতে সাহায্য করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কেমিক্যাল রিসার্চ জার্নাল থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের (এনসিআই) প্রকাশিত একটি ফ্যাক্ট শিট জার্নাল থেকে জানা গেছে, আগুনে যখন মাংস-চর্বিসহ ঝলসানো হয়, তখন মাংস থেকে যে রস বের হয় তা আগুনের মধ্যে পড়লে পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচএস) তৈরি করে। এই পিএএইচএস আগুনে পড়ে যে ধোঁয়ার তৈরি করে তা মাংসের গায়ে লেগে যায়। এগুলো আপনার ডিএনএ’র ক্ষতি করে।
প্রক্রিয়ারজাতকৃত মাংসও ডিএনএ’র ক্ষতির কারণ হতে পারে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রবার্ট টুরেস্কির এ তথ্য দিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড রিসার্চ ইন ক্যান্সার অ্যান্ড লাইফস্টাইলের পরিচালক স্টিফেন ফ্রিডল্যান্ড বলেন, সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার যদি ঝলসানো মাংস খান তবে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু আমি চাই না যে মানুষ অতঙ্কিত হোক।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, টিনের ফয়েলে মাংস গ্রিল করলে এবং ভেষজ এবং মশলা দিয়ে মেরিনেট করলে সম্ভাব্য কার্সিনোজেন কম তৈরি হতে পারে।
তবে মনে করবেন না বিজ্ঞান আপনাকে জীবন উপভোগ করতে দিচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঝলসানো বা গ্রিল করা মাংস একবারে বাদ না দিলেও চলবে। তবে খাওয়ার পরিমাণ যেন বেশি না হয়।