দুধের গুণ বোধহয় বলে শেষ করা যায় না! আমরা সকলেই জানি যে, দুধ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ দুধে রয়েছে ভিটামিন, বায়োটিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম এবং প্রোটিনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান।
কিন্তু আমরা অনেকেই যেটা জানি না, সেটা হল- রূপচর্চা বলা ভালো ত্বক চর্চার জন্যও কাঁচা দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এতে ত্বক আরও তরতাজা এবং জেল্লাদার হয়। ত্বকে কাঁচা দুধ ব্যবহারের পর যা ঘটবে চমকে যাবেন!
এখানেই শেষ নয়, কাঁচা দুধ ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে, হাইড্রেশন বাড়ায়, বলিরেখা বা বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতাও বাড়িয়ে তোলে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে কাঁচা দুধের জুড়ি মেলা ভার! তাহলে কথা না-বাড়িয়ে ঢুকে পড়া যাক মূল প্রসঙ্গে।
ময়েশ্চারাইজার: ভিটামিন-এ, ডি, বি৬, বি১২, বায়োটিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ত্বকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এই সব উপাদান কাঁচা দুধের মধ্যেই থাকে।
আর এগুলোই ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগায় এবং ময়েশ্চারাইজ করতে পারে। যার ফলে ত্বকে শুষ্কতা এবং চুলকানির সমস্যাও দূর হয়।
ময়েশ্চারাইজার বানাতে দুই থেকে তিন টেবিল-চামচ ঠান্ডা কাঁচা দুধে আধ টেবিল-চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটিতে তুলো ভিজিয়ে নিয়ে মুখে ও ঠোঁটে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে নিতে হবে।
এর পর তা শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুতে হবে। এটি যেমন ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করে তোলে, তেমনই গোটা দিন ত্বকের আর্দ্রতাও বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ফেসিয়াল ক্লিনজার: মেক-আপ, ত্বকের মৃত কোষ, অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা পরিষ্কার করতে আমরা সাধারণত ক্লিনজার ব্যবহার করে থাকি। আর ক্লিনজার হিসেবে কাঁচা দুধ তো ভীষণই ভালো।
কারণ এতে দুধের গুণ এবং পুষ্টি তো ত্বকে পৌঁছয়ই, সেই সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয় না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, কাঁচা দুধ অন্যতম প্রাকৃতিক ক্লিনজার বা ত্বকের ঘরোয়া টোটকা।
এর জন্য দুই টেবিল-চামচ কাঁচা দুধের সঙ্গে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ এক চিমটে হলুদ ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এর পর তুলো দিয়ে ধীরে ধীরে মিশ্রণটি মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে পরিষ্কার করে কিছুক্ষণ পরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
ফেস মাস্ক: ময়েশ্চারাইজার এবং ক্লিনজারের পাশাপাশি ফেস মাস্ক হিসেবেও কাঁচা দুধ দারুণ। কারণ দুধে রয়েছে ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম, আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ত্বকের কালো দাগ, ছোপ পরিষ্কার করতে, ট্যান-ব্রন দূর করতে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
এর জন্য দুই টেবিল-চামচ কাঁচা দুধের সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে মুখে লাগাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট ওই মাস্ক মুখে লাগিয়ে রেখে ঈষদুষ্ণ গরম জল দিয়ে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব: অনেকে জানলে অবাক হবেন যে, কাঁচা দুধকে ত্বকের এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। আসলে ল্যাকটিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের জন্য এটি এক্সফোলিয়েটিং এবং হাইড্রেটিং উপাদান হিসাবে দারুণ কাজ করে।
ত্বকের জেল্লা বজায় রাখতে এবং মৃত কোষ, ব্ল্যালহেডস্ ও হোয়াইটহেডস্ দূর করতে দুধ দিয়ে তৈরি স্ক্রাব খুবই উপকারী।
এই স্ক্রাবের জন্য দুই টেবিল-চামচ দুধের সঙ্গে এক টেবিল-চামচ চিনি এবং ১ টেবিল-চামচ বেসন মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এবার ১০ মিনিট ধরে ত্বকে এই মিশ্রণ মাসাজ করতে হবে এবং আরও ১০ মিনিট রেখে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
ভালো ফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে অন্তত দু’বার এই স্ক্রাব ব্যবহার করা উচিত। সূত্র: নিউজ এইট্টিন