সুন্দরবনের রূপে অভিভূত প্রিন্সেস ম্যারি

শ্যামলে সবুজে ঢাকা নদীখাল ঘেরা সুন্দরবনের অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দেখে নিজেই অভিভূত হলেন। বনের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে ভেসে ভেসে দুই তীরের সুন্দরী বন সুন্দরবন অবলোকন করেন তিনি। সুন্দরবন জনপদের পেশাজীবী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গিয়েই বললেন, হাউ আর ইউ? জবাব আসলো, উই আর ফাইন।

এভাবেই স্মিত হাসি নিয়ে দক্ষিণ উপকূলের দুর্যোগ কবলিত ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির শিকার হওয়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের গ্রাম কুলতলিতে সবার সঙ্গে কথা বলে সময় কাটালেন ডেনমার্কের প্রিন্সেস ম্যারি এলিজাবেথ।

বুধবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজার থেকে শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের টাইগার পয়েন্টে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির ও পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।

পরে তিনি গাড়িতে চেপে ৩ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের চুনা নদীর তীরে কুলতলি গ্রামে পৌঁছান। সেখানে কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটে তিনি কথা বলেন গ্রামবাসীর সঙ্গে। গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া নারী পুরুষ তাকে স্বাগত জানিয়ে হাসিমুখে বরণ করেন নেন।

এ সময় প্রিন্সেস ম্যারি কিছুক্ষণের জন্য আড্ডা আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন স্কুলগামী শিশুদের সঙ্গেও। তিনি পুষ্পা রানী মণ্ডল ও শিলা রানী মণ্ডলের বাড়িতেও কয়েক মিনিটের জন্য অতিথি হন।

প্রিন্সেস ম্যারি বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস কর্তৃক খননকৃত একটি খাল পরিদর্শন করেন। এই খালের পানিসেচ নিয়ে ধান ও শাকসবজিতে ভরে ওঠা ফসলি ক্ষেতও পরিদর্শন করেন তিনি এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির বিশদ বিবরণ সম্পর্কে তিনি অবহিত হন এবং দুর্যোগকালে ব্যবহারের জন্য একটি সাইক্লোন শেল্টারও পরিদর্শন করেন ডেনমার্কের রাজকুমারী।

গ্রামীণ নারীরা তাকে কাছে পেয়ে অত্যন্ত খুশী হন। এ সময় তারা বাঘের হামলায় তাদের স্বজনদের প্রাণ হারানোর করুন কাহিনীও তুলেন ধরেন। দুর্যোগের সময় কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তার বিবরণ দিয়ে সুপেয় পানি সংকটের কথা বলেন নারীরা।

প্রায় ৩০ মিনিট যাবত পায়ে হেটে কুলতলি গ্রাম পরিদর্শন শেষে প্রিন্সেস ম্যারি এলিজাবেথ তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে চলে আসেন মুন্সিগঞ্জের বরসা রিসোর্টে। সেখানে মধ্যাহ্নভোজন সারেন তিনি। পরে মুন্সিগঞ্জ নদীর ঘাটের পন্টুন থেকে স্পিডবোটে রাজকুমারী ম্যারিকে নিয়ে যাওয়া হয় কলাগাছিয়ায় ফরেস্ট টহল ক্যাম্প চত্বরে।

যেখানে প্রায়ই বাঘ আসে পুকুরের মিষ্টি পানি খাওয়ার জন্য। সেখানে রয়েছে বাঘের পায়ের ছাপ। এমনকি মৃত বাঘের কবরও। এসবই তিনি সচক্ষে দেখেন।

কলাগাছিয়ায় ঢেউ খেলানো নদীপথে যাতায়াতের সময় দুই তীরের বিশাল সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে তিনি অভিভূত হন। এর আগে তিনি দাতিনাখালিতে একটি বেড়িবাঁধ ভাঙন ও তার নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে তার সফরকালে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সাংবাদিক এমনকি আশপাশের গ্রামবাসীও প্রবেশ করতে পারেননি। প্রিন্সেস ম্যারি তার কয়েক ঘণ্টার সুন্দরবন সফর শেষে বিকালে হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে যান।