সংবাদমাধ্যমে কাজ করার সুবাধে প্রতিনিয়তই নানা রকম বিভৎস, অমানবিক কিংবা প্রকাশ অযোগ্য ছবি দেখতে হয়। যা দেখে স্বভাবতই আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এমনকি সামনে থেকে অনেক দুর্ঘটনা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এরকম দৃশ্য দেখে সাময়ীকভাবে খারাপ লাগলেও স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা সহনশীল হয়ে যায়।
গতকাল চিত্রনায়ক রিয়াজের শশুড় মহসিন খানের আত্মহত্যার ভিডিওটি না চাইতেও দেখতে হয়েছে। ভিডিওটি খুব বেশি মর্মান্তিক দৃশ্য না থাকলে এর পিছনের গল্প সত্যি খুব মর্মান্তিক। তার কথাগুলো আমার কাছে আত্মহত্যার চেয়ে ভয়াবহ লেগেছে। তার প্রতিটা কথাই আমাকে স্পর্শ করেছে। মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে তার কথার মধ্যে আমি আমার ভবিষৎ দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে তিনি বলেছিলেন, ‘আসলে আরেকটা জিনিস দেখলাম যে, পৃথিবীতে আপনিই আপনার। ছেলে বলেন, মেয়ে বলেন, স্ত্রী বলেন কেউই আপনার না। কারণ আজকে আপনি যেভাবে হয়তো আপনার ফ্যামিলিকে মেইন্টেন করছেন। কাল যদি আপনি মেইন্টেন করতে না পারেন তখনই দেখা যাবে আপনার ওয়াইফের সঙ্গে আপনার দ্বন্দ্ব হবে। আপনার ছেলে বা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করছে না। এগুলো কেন করে? ফ্যামিলির লোকজন কেন বুঝতে চায় না? ’
আত্বহত্যা কখনই কোন সমস্যার সমাধান হতে পারেনা। তবুও মানুষ করে ফেলে। ভাবে সে বুঝি মুক্তি পেয়ে গেল। মহসিন খানের কষ্ট বোঝার কেউ ছিল না। এমন হাজারো মহসিনের বাস বাংলাদেশে। এটা মহসিনের একার গল্প নয়, হাজারো বৃদ্ধের অবহেলা আর কষ্টের গল্প। এ গল্প এদেশের দেড় কোটি প্রবীনের গল্প।
সন্তানকে বাবা-মা অনেক কষ্ট করে বড় করে। নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে সন্তানদের। তাদের নিকট কোন কিছুই প্রত্যাশা হয়ত বাবা-মা কখনই করেনা। তবুও একটা বয়সে গিয়ে নিজের চলার মত শক্তি থাকেনা, নিসঙ্গ জীবন যাবন করতে হয়। ছেলে কিংবা ছেলের বউরা নিজের কাছে রাখতে চায়না। এটাযে কতটা কষ্টের এক জীবন যে সামনে থেকে দেখেছে বা যার সাথে হয়েছে সেই বুঝতে পারবে।
বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধ পিতামাতারা নানাভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছেন। অকথ্য লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য না করতে পেরে অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই ভেসে উঠে এমন সংবাদ। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? এর কারণ কি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি আমরা! এর প্রধান কারণ সন্তানের ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব এবং বাস্তবতার অত্যুজ্জ্বল ঝলকানির মোহে শৈশবের স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়া।
শেষ কথা বলতে গিয়েও বলা হয়ে উঠেলোনা, কানের কাছে এখন মনে হয় মহসিন সাহেবের কথাগুলো বাজছে, ‘পৃথিবীতে আপনিই আপনার। ছেলে বলেন, মেয়ে বলেন, স্ত্রী বলেন কেউই আপনার না’।
লেখক: আমিরুল ইসলাম আসাদ
এডিটর-ইন-চিফ, বিডি২৪লাইভ ডট কম