যুবলীগ। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। কতিপয় নেতার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বদনাম জুটছিল সংগঠনটির কপালে। নানামুখী সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিল যৌবনদীপ্ত যুবলীগ। বিশেষ করে আলোচনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের (পরে বহিষ্কৃত) সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।
তিন বছর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার হন যুবলীগ নেতা সম্রাট। গেল আগস্ট মাসে জামিনে এখন মুক্ত তিনি। আর তাকে ঘিরে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। সম্রাট যেখানে যান সেখানেই তার অনুসারী নেতাকর্মীদের ভিড়।
কারামুক্তির পর সম্রাট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেসময় তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
জানা গেছে, সম্রাট ফের রাজধানীর কাকরাইলে তার অফিসে নিয়মিত বসছেন। সেখানেও দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। আলোচিত এই নেতা তার অনুসারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
ধানমন্ডি ৩২ ও কাকরাইলে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে দেখা গেছে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনদ্দীন রানা, সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপনসহ সভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, হারুনুর রশিদ, নাজমুল হোসেন টুটুল, কামাল উদ্দিন খান, মহসিন মাহমুদ, মজিব মহসিন পিয়াস, আলী আকবর বাবুল, মুরসালিন আহমেদ, খোরশেদ আলম মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমেদ রানা, ওমর ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বকুল, মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, কাজী ইব্রাহিম খলিল মারুফ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক ওমর শরীফ পলাশ, আইন সম্পাদক শাহনাজ পারভীন হীরা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশিকুর রহমান নাদিম, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আকতার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক গোফরান গাজী, ধর্ম সম্পাদক আবুল কাশেম খাঁসহ উপ-সম্পাদক, জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোক্তার হোসেন, উপ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক নজরুল, কার্যনির্বাহী সদস্য মনির বিশ্বাস, এ আর বাচ্চুসহ মহানগর ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনদ্দীন রানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, সম্রাট কাকরাইল অফিসে বসেন না। শুক্রবার আমি নামাজ পড়তে কাকরাইল গিয়ে দেখি তিনি আছেন, তাই দেখা করেছি। প্রায় তিন বছর ধরে সম্রাট ভাইয়ের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দেখা সাক্ষাৎ হয় না। তাই নেতাকর্মীরা দেখা করতে আসছেন।
মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, সম্রাট কাকরাইল অফিসে এখনো বসা শুরু করেননি। দক্ষিণ যুবলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আশিকুর রহমান নাদিম এই এলাকায় তার বাড়ি, সেখানে তিনি এসে বসেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘কাকরাইল অফিস এখন সিটি এসবির অফিস। এছাড়া সম্রাট ভাইয়ের অফিস তালা মারা। সিটি এসবি অফিস নিয়ে চলে যাওয়ার পরে কাকরাইল অফিসে সম্রাট ভাই বসতে পারেন। অনেকদিন ধরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয় না তাই দেখাসাক্ষাৎ করতে আসছেন তিনি।’
এদিকে দীর্ঘ প্রায় এক দশক পরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এ সম্মেলনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিতর্কিত ক্যাসিনোকাণ্ডের হোতারা। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের সক্রিয়তার জানান দিতে চাইছেন তারা।
তবে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, সতর্ক আছেন তারা। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও ক্যাসিনোকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল প্রমাণ পেলে কোনোভাবেই তাদেরকে দলে জায়গা দেওয়া হবে না। এই বিষয়ে সতর্ক হয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মহানগর যুবলীগে থানা কমিটি না থাকায় প্রথমে ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি সম্পন্ন করে মহানগর কমিটি করা হবে।
ঢাকা মহানগর যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাসিনোকাণ্ডের সেই বলয় আর রাজনীতির প্যানেল ও গ্রুপিং করে বিতর্কিত লোক ফিরছেন মহানগর যুবলীগের রাজনীতিতে। দীর্ঘদিন দলের কোনো কর্মসূচিতে তাদেরকে দেখা না গেলেও সন্মেলনকে ঘিরে সক্রিয় তারা। যাদের কারণে যুবলীগের দুর্নাম ছড়িয়ে, এরা আবার দলীয় পদ-পদবী ভাগিয়ে নিতে নিজের বলয় তৈরি করছে। ক্যাসিনোকাণ্ডের অভিযানের পর ক্যাসিনোর হোতারা গা-ঢাকা দিলেও এখন আবার সক্রিয়।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেছেন, ক্যাসিনোকাণ্ডের হোতারা সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে রাজনীতিতে ফিরলেও সংগঠনের সুনাম ধরে রাখতে সতর্ক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুবলীগ। ঢাকা মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। এবার ঢাকা মহানগর যুবলীগে চমক দিয়ে এক ভিন্নধারায় নেতৃত্ব আনতে চান তারা। তারুণ্য আর উদ্যম সম্বলিত নেতৃত্ব আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে কোনোভাবেই যেন ক্যাসিনোহোতারা দলীয় পদে আসীন হতে না পারে সে বিষয়ে বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে।
আগামী ডিসেম্বর মাসে মাদার সংগঠন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার যুবলীগের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড সম্মেলন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনো মহানগর উত্তর, দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলেনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ইউনিট, ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ হওয়ার পরে উত্তর, দক্ষিণ সম্মেলন শুরু করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত কোনো লোক যুবলীগে আসার সুযোগ নেই। তারপরেও যদি কোনো লোক সংগঠনে এসেও যায় তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের অনেকেই ফের সক্রিয় হয়ে উঠছেন। তাদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ যেসব নেতাকর্মী ক্যাসিনো অভিযানের সময় গা-ঢাকা দিয়েছিল বা বিদেশে পালিয়েছিল তারা সক্রিয় হতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও রাজনীতি করে গেছেন সরবভাবে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগের শীর্ষ নেতারা দেখা করবেন। তার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর যুবলীগের দুই শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন ও সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হবে।