পরকীয়ার নিষিদ্ধ হলেও যুগে যুগে এর ডাকে সাড়া দিয়েছেন বহু পুরুষ এবং মহিলা। বর্তমানে পরকীয়া বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর ফলে বিচ্ছেদের হারও বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের সম্পর্ক পারিবারিক জীবনে অশান্তি ডেকে আনে। যা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কিছু কিছু পেশার মানুষের মাঝে পরকীয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে বেশি। সেগুলোর মধ্যে সবার ওপরে আছে সামাজিক কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা। তারপরে আছে শিল্প ও বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা।
শীর্ষ ডেটিং ওয়েবসাইট অ্যাশলি ম্যাডিসনের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ১২ পেশার মানুষ সবচেয়ে বেশি পরকীয়া করে। অ্যাশলি ম্যাডিসন সাইট ব্যবহারকারীদের ১,০৭৪ জন এই জরিপে অংশ নেন বলে জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার।
অ্যাশলি ম্যাডিসন ওয়েবসাইটটি মূলত বিবাহিত নারী-পুরুষের পরকীয়ার সুযোগ করে দেয়। দেখা গেছে, জীবনসঙ্গীর প্রতি অনীহা থাকলেও তারা চাকরির প্রতি বেশ বিশ্বস্ত। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ শতাংশ মানুষ সারা জীবন একই পেশায় কাজ করে গেছেন। বাকিরা ১০ বছরে একবার পেশা পাল্টেছেন। অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অ্যাশলি ম্যাডিসনের ব্যবহারকারী থাকলেও ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশে ব্যবহার করা যায় না। অ্যাশলি ম্যাডিসনের জরিপ অনুযায়ী ইনফিডেলিটি বা জীবনসঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা, অর্থাৎ পরকীয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নিচের ১২টি পেশায়-
১. ডাক্তারি পেশা (নারী এবং পুরুষ): পরকীয়ায় জড়িত নারীদের মাঝে ২৩ শতাংশ ছিলেন ডাক্তার অথবা নার্স। অ্যাশলি ম্যাডিসনের ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশন ইসাবেল মিসে বলেন, ‘লম্বা সময় ধরে কাজ, এর পাশাপাশি বেশি পরিমাণে স্ট্রেস পরকীয়ার জন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে।’ অন্যদিকে, পরকীয়া করেন এমন ৫ শতাংশ পুরুষ ডাক্তার এবং নার্স পেশায় ছিলেন বলে দেখা যায়।
২. শিক্ষা ক্ষেত্র (নারী ও পুরুষ): পরকীয়ায় জড়িত ১২ শতাংশ নারী ছিলেন শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে পরকীয়ায় জড়ান এমন ৪ শতাংশ পুরুষ অধ্যাপক, প্রভাষক এবং শিক্ষক পেশায় কাজ করেন।
৩. অন্ট্রেপ্রেনার বা উদ্যোক্তা (নারী ও পুরুষ): অ্যাশলি ম্যাডিসনের জরিপে দেখা যায়, উদ্যোক্তা পেশাটি পরকীয়াপ্রবণ নারী ও পুরুষ উভয়ের মাঝেই জনপ্রিয়। জরিপে বলা হয় হয়তো নিজের মতো করে জীবন চালাতে চান বলেই তাদের মাঝে পরকীয়ার প্রবণতা বেশি।
৪. অর্থনীতি (নারী ও পুরুষ): জরিপে অংশ নেওয়া নারীদের মাঝে ৯ শতাংশ ফিন্যান্সে কাজ করতেন। অন্যদিকে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করছেন এমন ৮ শতাংশ পুরুষ কাজ করেন ফিন্যান্সে।
৫. রিটেইল অ্যান্ড হসপিটালিটি (পুরুষ ও নারী): জরিপে অংশ নেওয়া ৮ শতাংশ ওয়েটার, বারটেন্ডার, বারিস্তা (কফি প্রস্তুতকারক) বা হোটেলকর্মী ছিলেন। অন্যদিকে পরকীয়াপ্রবণ ৯ শতাংশ নারী বিভিন্ন দোকানে বা হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন।
৬. সমাজকর্মী (নারী ও পুরুষ): অবাক হলেও সত্যি যে, পরকীয়া করেন এমন নারীর মাঝে সমাজকর্মীরাও আছেন। অ্যাশলি ম্যাডিসনের এই জরিপে দেখা যায়, পরকীয়া প্রবণ ৯ শতাংশ নারী সমাজকর্মী। অন্যদিকে পরকীয়ায় জড়িত ২ শতাংশ পুরুষ ছিলেন সমাজকর্মী।
৭. মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন (পুরুষ ও নারী): পরকীয়ায় জড়িত ৬ শতাংশ পুরুষ মার্কেটিং এবং কমিউনিকেশনে কাজ করেন। অন্যদিকে পরকীয়া করেন এমন নারীদের মাঝে ৪ শতাংশ কাজ করেন এ পেশায়।
৮. আইটি (নারী ও পুরুষ): আইটি পেশায় ইদানীং নারীরাও বেশ সক্রিয়। পরকীয়ায় জড়িত ৮ শতাংশ নারী এই ক্ষেত্রে কাজ করেন। অন্যদিকে পরকীয়া করেন এমন পুরুষের মাঝে ১২ শতাংশ আইটি খাতে কাজ করেন।
৯. আইনি পেশা (পুরুষ ও নারী): অ্যাশলি ম্যাডিসনের এই জরিপে অংশ নেওয়া ৪ শতাংশ পুরুষ আইনসংক্রান্ত পেশায় কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে পরকীয়ায় জড়িত ৪ শতাংশ নারী কাজ করেন আইনি পেশায়।
১০. ব্যবসা (নারী ও পুরুষ): নির্মাণ এবং অবকাঠামোসংক্রান্ত পেশায় আছে এমন নারীদের মাঝে তুলনামূলক কম দেখা যায় পরকীয়ায় জড়ানোর ঘটনা। অ্যাশলি ম্যাডিসনের এই জরিপে দেখা যায় ৪ শতাংশ নারী এই ধরনের পেশায় জড়িত। অন্যদিকে পরকীয়ায় জড়িত পুরুষদের মাঝে ২৯ শতাংশই ব্যবসায় জড়িত। ব্যবসার কাজে সময়ে-অসময়ে বাড়ির বাইরে থাকার প্রয়োজন পড়ে, সুতরাং গোপনে পরকীয়ার সুযোগটাও পান তারা।
১১. শিল্প ও বিনোদন (নারী ও পুরুষ): অ্যাশলি ম্যাডিসনের এই জরিপে দেখা যায়, পরকীয়ার সঙ্গে জড়িত ৪ শতাংশ নারী শিল্প-সাহিত্য বা বিনোদন পেশায় কাজ করেন। অন্যদিকে শিল্প-সাহিত্য এবং বিনোদনের সঙ্গে জড়িত ৩ শতাংশ পুরুষ পরকীয়া করেন।
১২. কৃষিকাজ (পুরুষ): পরকীয়ায় জড়িত ৩ শতাংশ পুরুষ কৃষিকাজ, যেমন ফার্মিং করেন। ১৩. রাজনীতি (নারী): পরকীয়ায় জড়িত মাত্র ১ শতাংশ নারী ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।