বর্তমানে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সারা বিশ্ব জুড়ে মাথাব্যথার একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত চল্লিশ বছরে বিশ্বে পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে গড়ে ৫৯ শতাংশ। এর পিছনে প্রধান কারণ যে খাদ্যাভাস সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এজন্য যেসব খাবার পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে সেগুলো তালিকা করে আলাদ করে খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে। যেসব খাবারে পুরুষের বন্ধ্যত্ব বাড়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রক্রিয়াজাত মাংস:
হার্ভার্ডের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব পুরুষ সপ্তাহে ৩ বার বা তার বেশি প্রক্রিয়াজাত মাংস খায় তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে খুব কম পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস খায় তাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা ২৮ গুণ বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রক্রিয়াজাত মাংস শুক্রাণুর পরিমাণ হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। বেকন, সালামি , হটডগ, বার্গার যে যে খাদ্যে এই ধরনের মাংস ব্যবহৃত হয় তাদের উপর করা একটি সমীক্ষা এ তথ্য জানিয়েছে। মূলত রেড মিট এসব কিছুর জন্য দায়ী। মুরগির মাংসে অবশ্য এরকম কোনও ফল দেখা যায়নি। যারা মুরগি বেশি খায় তাদের শুক্রানুর পরিমাণ বেশি খায় যারা মুরগি খায়না তাদের তুলনায়।
ট্রান্স ফ্যাট বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট:
বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট বলছে, ট্রান্স ফ্যাট হৃদযন্ত্রের ঝুঁকির কারণে হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া ট্রান্স ফ্যাট থেকে অ্যাসিডিটির পরিমাণও বাড়ে। আর এজন্য শুক্রানুর পরিমাণও হ্রাস পায়।
সয়া জাতীয় খাদ্য:
গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, যারা সয়াজাতীয় খাবার বেশি খায় তাদের শুক্রানুর পরিমাণ কমে যায়। সয়া জাতীয় খাবার গুলো হলো সয়া মিল্ক, প্রোটিন বার, টোফু, ভেজি বার্গার ইত্যাদি। যাদের ওজন বেশি তারা সয়া জাতীয় খাবারে বেশি প্রভাবিত হয়।
সয়াবিন আইসোফ্লাভোনে সমৃদ্ধ, যা পরীক্ষায় দেখা যায় যে, শরীরে টক্সিন উৎপাদন করে। হার্ভার্ডের একটি গবেষণায় শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার সাথে আইসোফ্লাভোনের যে সম্পর্ক তা দেখানো হয়েছে। সয়া একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে, তবে আপনি যদি ফার্টিলিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে এটি তালিকা থেকে দূরে রাখুন।
উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার:
দুধ আদর্শ খাবার সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে আপনি যদি ফার্টিলিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে সব দুগ্ধজাত খাবার আপনার জন্য ভালো না। ১৮-২২ বছর বয়সী ১৮৯ জন পুরুষের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য শুক্রানুর গতি, চলাচলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবাদি পশুদের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। এর প্রভাব পরে দুধেও। এই ধরনের গবাদি পশুর দুধে স্নেহজাতীয় পদার্থ থাকে অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে যে দিনে তিন ভাগ পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেলেও পুরুষদের শুক্রাণুর গুণগত মান খারাপ হয়ে যায়। গবেষণা অনুসারে, যে যুবকরা তিন টুকরো পনিরের বেশি খায় তারা তাদের উর্বরতা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
তবে শুধু খাদ্য নয়, বর্তমানে উপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য সংরক্ষণের জন্য যে ধরনের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় সেগুলোও শুক্রাণুর সমস্যার জন্য দায়ী।