আমাদের শরীরে ছাঁকনির কাজ করে কিডনি। শরীর থেকে যাবতীয় দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে শরীরকে তরতাজা রাখার কাজ হল কিডনির। কিডনির সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলির গভীর সংযোগ রয়েছে। আর তাই কিডনি বিকল হলে কোনও অঙ্গই তখন ঠিকমতো কাজ করে উঠতে পারে না।
উচ্চরক্তচাপ কিংবা রক্তে শর্করার পরিমাণ যদি খুব বেশি থাকে সেক্ষেত্রে কিন্তু নানা রকম সমস্যা হয়। কারণ শরীরের যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ তখন ঠিকমতো বের হতে পারে না। আর তা জমতে শুরু করলেই মুশকিল। তখনই আর কিডনি ঠিক করে কাজ করতে পারে না। তাই যাদের সুগার, প্রেসার বা অন্যান্য কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের কিডনি বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত। উচ্চ ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে নিজের অজান্তেই প্রভাব পড়ে কিডনিতে। তাই এই সব লক্ষণ দেখলে আগেভাগেই সতর্ক হতে হবে।
শরীর থেকে দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করে দেওয়া কাজ কিডনির। আর যখনই সেই কাজে ঘাটতি পড়ে তখনই কিন্তু শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। পায়ের পাতা হলুদ হতে শুরু করে। গোড়ালি ফুলে যায়। আস্তে আস্তে পা, মুখ, চোখ, হাত এসব ফুলতে শুরু করে। কারণ একটাই। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করায় শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ সোডিয়াম জমা হয়েছে। এছাড়াও পায়ের চামড়া খসখস করে। গোড়ালি ফুলে যাওয়ার প্রবণতাকে ইডিমা বলে।
শরীর প্রায়ই ক্লান্ত লাগা, দুর্বল বোধ হওয়া- এসব লিভারের সমস্যা হলেই বেশি দেখা যায়। কিন্তু কিডনির সমস্যা হলেও এই ক্লান্তি, তলপেটে ব্যথার মতো সমস্যা থেকে যায়। কিডনির সমস্যা গুরুতর হলে সামান্য হাঁটাচলাতেই ক্লান্ত লাগে। খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও চলে যায়। মূলত শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হওয়ার কারণেই এসব সমস্যা হয়।
শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন জমলে খিদে কমে যায়। সেই সঙ্গে খাবার দেখলেই সব সময় বমি ভাব থাকে। এছাড়াও ওজন কমতে শুরু করে চটজলদি। আস্তে আস্তে খাওয়ার অনুভূতিটাই চলে যায়। সব সময় মনে হয় যে পেট ভর্তিই রয়েছে। এরকম লক্ষণ কিন্তু উদ্বেগের। একে অবহেলা করবেন না।
সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনের মধ্যে ৬-১০ বার প্রস্রাব পায়। এর থেকে যদি কম বা বেশিবার প্রস্রাবে যেতে হয় তাহলে কিন্তু তা কিডনির সমস্যারই ইঙ্গিত দেয়। বেশি বা কম প্রস্রাব কোনওটাই শরীরের জন্য ভাল নয়। এছাড়াও অনেকের প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন- এসবও কিন্তু কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত।
শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হলে ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকে নানা রকম অ্যালার্জি, চুলকানির সমস্যা আসে। এছাড়াও ঘাম হলে তাতে দুর্গন্ধ বেশি থাকে। শরীর থেকেও মাঝেমধ্যে বাজে গন্ধ তৈরি হয়। পাযের পাতায় ঘাম হয়। মূলত এসব কিডনির সমস্যারই লক্ষণ।
হঠাৎ করেই ওজন কমতে থাকা, খিদে কমে যাওয়া , খাবার দেখলেই বিরক্ত হওয়া কিংবা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি বমি ভাব থাকে, তাহলে সেটি কিন্তু হতে পারে কিডনির সমস্যার জন্য। এই সব লক্ষণই আমাদের জানান দেয় শরীর বিপাকে পড়েছে। ফলে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।